বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি; যাতে পেঁয়াজ সঙ্কট নিয়েই বেশি আলোচনা হয়।
পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কট শুরুর প্রায় তিন মাস পর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরব হতে দেখা গেল ক্যাবকে।
বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে গোলাম রহমান বলেন, “শুরু পেঁয়াজ দিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে। তারপর একে একে চাল, ডাল, ময়দা, আটা, সয়াবিন তেল, ডিমসহ নানা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতকালীন সবজির দাম এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।”
পেঁয়াজের সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন এতদিন।
পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ আছে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর মজুদে ঘাটতি পড়েছে।
ক্যাব সভাপতি বলেন, “পেঁয়াজ সঙ্কট সমাধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। এরপরও বাজারে বিপর্যয়ের কারণে পেঁয়াজের মূল্য এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।”
এসব সমস্যার সমাধানে আরও ‘পরিকল্পিত ও দীর্ঘ মেয়াদী’ কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
গোলাম রহমান বলেন, “ভোক্তাস্বার্থ বিবেচনা, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের স্বার্থের বিষয়টি তুলে ধরা, ভোক্তাস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন, চাহিদা, উৎপাদন, আমদানির সঠিক পরিসংখ্যান সংরক্ষণ জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে ১৫ থেকে ২০টি খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চিহ্নিত করে সে সব পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব অর্পণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক ডিভিশন অথবা একটি স্বতন্ত্র ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।”
পেঁয়াজের সংকটকে পুঁজি করে ‘অতি মুনাফা লোভী’ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, আমদানিকারক, আড়ৎদার, মজুতদার এবং খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ‘অস্বাভাবিক’ মূল্য বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে ‘শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, “সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে টিসিবির ডিলারদের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে। তাছাড়া বাজার অভিযানের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও নেয়। ব্যবসায়ীদের অধিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে মোটা অংকের জরিমানাও করা হয়।”
তবে এসব ব্যবস্থা সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হয়নি বলে মনে করছেন গোলাম রহমান।
পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ‘ব্যর্থতা’ নতুন করে চালের মূল্য বৃদ্ধিতে ‘উৎসাহী’ করে তুলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত এক মাসে চালের দাম কেজিতে দুই টাকা থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
“গত মৌসুমে অনেক কৃষক উৎপাদন মূল্যের চেয়েও কম দামে ধান বিক্রি করলেও নতুন করে ধান-চালের মূল্য বৃদ্ধির সুফল কৃষকের ঘরে পৌঁছায়নি।”
এই সমস্যার সমাধানে চালকল মালিক ও কৃষকের মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করে ‘চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ’ প্রথা চালুর আহ্বান জানিয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “প্রয়োজনে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসেন ও মুন্সিগঞ্জ জেলার সভাপতি জাহাঙ্গীর সরকার উপস্থিত ছিলেন।