‘বেশি লাভের আশায়’ ঢাকার আড়তে সবজির মজুদ

পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়ে ঢাকায় চাহিদার তুলনায় সবজি সরবরাহ কমে দাম বাড়ার আশায় মজুদ করেছেন আড়তদাররা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 04:35 PM
Updated : 20 Nov 2019, 05:11 PM

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘটের প্রথম দিন বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

সেখানকার কয়েকজন আড়তদার ও ব্যবসায়ী বলেছেন, ধর্মঘটে সড়ক পথে পণ্য পরিবহনে সমস্যা হতে পারে ভেবে মঙ্গলবার রাতেই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি সবজির চালান এসেছে ঢাকার এই পাইকারি বাজারে।

এদিন কারওয়ান বাজারে সবজির দাম তেমন বাড়েনি। তবে আড়ৎগুলোতে শিম, লাউ, বেগুন, শসা, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির অতিরিক্ত মজুদ দেখা গেছে।

এই বাজারের আড়ৎদারদের থেকে সবজি কিনে সেখানেই খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন শফিকুল ইসলাম। ঢাকার পাড়া-মহল্লার বাজারগুলোর তুলনায় এসব খুচরা দোকানে দাম থাকে তুলনামূলক কম।

শফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে উত্তরবঙ্গ এবং নড়াইল, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা থেকে সবজির ট্রাক আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে বুধবার রাতে সবজির ট্রাক কম আসতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

“সবজির ট্রাক আসতে সমস্যা হতে পারে বুঝতে পেরে আড়তদাররা আগের রাতেই ব্যাপক সবজি নিয়ে এসেছে। অনেকেই সব বিক্রি না করে নিজেদের আড়তে তা মজুদ করে রেখেছে। আজকে আমি কয়েকটি আড়তে মুলা কিনতে এসেছিলাম। মুলা থাকা সত্ত্বেও আড়তদাররা বিক্রি করেনি। আগামীকাল কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করার আশায়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আড়ৎদার হানিফ ব্যাপারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতরাতে পর্যাপ্ত সবজির ট্রাক আসলেও আজ রাতে কিছুটা কম আসবে। অবরোধের কারণে ট্রাকের ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এই দুই কারণে বৃহস্পতিবার সবজির দাম কিছুটা বাড়তে পারে।”

তিনি বলেন, “অবরোধের ভয়ে অনেকে ট্রাক রাস্তায় নামাতে চাচ্ছে না। আবার যারা রাস্তায় নামবে তারা ভাড়া চাইবে দ্বিগুণ। এমনি সময়ে ভাড়া ১০ হাজার টাকা, তবে আজকে ভাড়া নিচ্ছে ২০ হাজার টাকা করে।”

বুধবার এই বাজারে দেশি টমেটো কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, মরিচ ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, সিম ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা আবুল কালাম জানান, বাজার পরিস্থিতি আগের দিনের মতোই আছে। অবরোধের কথা শোনা গেলেও বাজারে খুব একটা প্রভাব এখনও পড়েনি। তবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।

বাজারে পটল ও চিচিঙ্গার দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

কারওয়ান বাজারে দাম তেমন না বাড়লেও রাজধানীর মহল্লার কাচাবাজারগুলোতে সবজির দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে পরিবহন ধর্মঘটকে কারণ হিসাবে দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা।

মহাখালী কাচাবাজারে সবজি বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, বেগুন ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

“অবরোধের কারণে সরবরাহ কম, তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।”

মহাখালীতে আগের দিনের তুলনায় বরবটি ও করলার দাম ১০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর বাড্ডায় লেকপাড়ের কাচাবাজারে প্রতিটি ফুল কপি ৬০ টাকা এবং বাধাকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বেগুন ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা ও ঢেঁড়শ ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।

এই বাজারের বিক্রেতা জুয়েল মিয়া বলেন, “অবরোধের কারণে বাজারে কোনো প্রভাব পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। সবজির দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। গতকালকেও একই দামে এসব পণ্য বিক্রি হয়েছে।”

তবে এই বাজারে কেনাকাটা করতে আসা আসিফ অভিযোগ করেন, অধিকাংশ শাক সবজির দামই তিনি বেশি দেখতে পাচ্ছেন। ধর্মঘটের কথা শুনে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দাম বাড়ল আটা-ময়দা-তেলের

কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান মাজেদা স্টোরের নূর আলম জানান, গত ১০ দিন ধরে সয়াবিন তেল, পাম তেল, আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে।

“খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৩ টাকা করে বেড়ে ৮১ টাকা হয়েছে। পাম তেল ৫৭ টাকা থেকে বেড়ে ৬৩ টাকায় পৌঁছেছে। ময়দার দাম ছিল আগে ছিল প্রতি বস্তা ১৪৫০ টাকা, এখন হয়েছে ১৯৫০ টাকা। আটার বস্তা ১৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০০ টাকা হয়েছে।”

উত্তর বাড্ডার মুদি দোকান সিটি স্টোরের বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন জানান, খুচরায়ও সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকায় পৌঁছেছে। পাম তেল ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে।

পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে

এদিকে গত তিন দিনের ধারাবাহিকতায় বুধবার কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের দাম আরেক ধাপ কমেছে। মিশরের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

একদিন আগে মিশরের পেঁয়াজ ১২০ টাকা, দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল বলে জানান বিক্রেতারা।

বাড্ডা কাচাবাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ২০০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে মিয়ানমার ও মিশরের পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও দেশি পেঁয়াজের আড়ৎগুলো ছিল অনেকাংশেই ফাঁকা।

সোলায়মান মিয়া নামের একজন বিক্রেতা বলেন, এখন প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম কমছে।

“জেলায় দাম বেশি হলেও ঢাকায় প্রশাসনের লোকের চাপাচাপিতে সেই দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি আপাতত অনেকেই বন্ধ রেখেছে।”