বেনাপোল বন্দরে পরীক্ষাগার না থাকায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি করা পণ্যের নমুনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় পণ্য খালাস ও শুল্কায়নে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2019, 06:57 AM
Updated : 18 Oct 2019, 07:17 AM

বাইরে থেকে নমুনা পরীক্ষা করে আনতে হয় বলে আমদানি করা পণ্য বন্দরে পড়ে থাকছে দীর্ঘ সময়। আর তাতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে; আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা।

বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমদানি করা চকোলেট, বিস্কুট, চিনি, খাদ্যদ্রব্যের কাঁচামাল, প্রসাধন সামগ্রী, সিরামিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, স্যানিটারি সামগ্রী ও শিল্প কারখানার রাসায়নিকসহ ৫৫টি পণ্য 'পরীক্ষণ সনদ' ছাড়া বন্দর থেকে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয় না।

কিন্তু সেই পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বেনাপোল বন্দরে নেই। বেনাপোল শুল্কভবনে স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডাস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) একটি শাখা চালু আছে। কিন্তু বন্দরে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষার জন্য বিএসটিআই বা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) কোনো শাখা নেই।

বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, “দেশের শুল্কভবনগুলোর মধ্যে আমাদের কাস্টমস ল্যাব সমৃদ্ধ। কিন্তু এখানে রাসায়নিক পণ্য ছাড়া অন্যগুলো আমরা পরীক্ষা করতে পারি না। বাকিগুলো ঢাকায় বিসিএসআইআর ও বিএসটিআইতে পাঠাতে হয়। সেখান থেকে প্রতিবেদন আসতে কখনও কখনও এক মাসের বেশি সময় লেগে যায়।”

বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয়, তার ৭০ শতাংশ আসে বেনাপোল দিয়ে। এ পথে বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়, যা থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পায়।

“অথচ এখানে পণ্য পরীক্ষার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। আমদানি করা পণ্য বাইরে থেকে পরীক্ষা করে আনতে অনেক সময় নষ্ট হয়।”

আমদানিকারক 'তানভির এন্টারপ্রাইজের' মালিক ফয়সল আহম্মেদ বলেন, খাদ্যদ্রব্যের একটি চালান বেনাপোল বন্দরে পৌঁছালে তার নমুনা সংগ্রহ করে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। পরে সেই নমুনা বিসিএসআইআর, বিএসটিআই ও বুয়েটসহ স্বীকৃত সংস্থার ল্যাবে পাঠানো হয়।

নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন ঢাকা থেকে বেনাপোলে পৌঁছাতে তিন সপ্তাহ সময় লাগে।সেই পরীক্ষাও বেশ ব্যয়বহুল বলে জানান তিনি।

“চকোলেট, গুঁড়োদুধ, বিস্কুট, টুথপেস্ট, হেয়ার অয়েল জাতীয় পণ্য অন্য মালের সাথে অল্প করে আনা হয়। আমদানি মূল্য কম হলেও ঢাকার সায়েন্সল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রতিটির ক্ষেত্রে ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়।

“এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, মালের দাম ও শুল্কের পরিমাণের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার খরচ বেশি হয়ে যায়।''

এছাড়া বিএসটিআই তাদের নির্ধারিত ১৫৫টি পণ্যের বাইরে অন্য পণ্যের নমুনা পরীক্ষা না করায় বৈধভাবে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের চালান শুধু নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস বন্দরে পড়ে থাকে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

“আর বন্দরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ না থাকায় রোদ গরমে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্যের গুণগত মানও নষ্ট হয়।”

নেসলে বাংলাদেশের বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট 'ইসলাম অ্যান্ড সন্সের' ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন বাবু জানান, তাদের আমদানি করা ইনস্ট্যান্ট সুপ পরীক্ষার জন্য চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বেনাপোল কাস্টমস হাউজে জমা দেওয়া হয়। সেদিনই তা পাঠানো হয় ঢাকায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ল্যাকে। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায় ১৫ অক্টোবর।

একই কোম্পানির একটি শিশুখাদ্য রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য বিসিএসআইআরে পাঠানো হয় ১ সেপ্টেম্বর; রিপোর্ট পাওয়া যায় ২৩ সেপ্টেম্বর।

বাবু বলেন, “রিপোর্ট পাওয়ার এই দীর্ঘ অপেক্ষার মধ্যে বন্দরের গুদামে পণ্যগুলো ইঁদুরে কেটে অর্ধেক নষ্ট করেছে। বন্দরের অভ্যন্তরে তীব্র গরমে অনেক পণ্য গলে নষ্ট হয়ে গেছে।”

বেনাপোলের শুল্কভবনের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের শাখা আছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা পরীক্ষার সুবিধা পান। কিন্তু বেনাপোলে এ সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এতে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পাশাপাশি বাজারে ভোক্তার ওপরও প্রভাব পড়ে।

" শুল্কভবনে স্বল্প পরিসরে 'বিএসটিআইয়ের একটি শাখা চালু হয়েছে। তবে বিসিএসআইআরসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের শাখাও যাতে দ্রুত স্থাপন করা হয় তা লিখিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে।"