ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়ে এই সেল গঠন করতে হবে।
সোমবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে এ নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে ব্যাংকগুলোকে এই সেল গঠন করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
‘তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক ১০০ কোটি টাকা এবং তদূর্ধ্ব স্থিতি বিশিষ্ট শ্রেণীকৃত ঋণ হিসাবসমূহ তদারকি’ শীর্ষক সার্কলারে বলা হয়েছে, “খেলাপি ঋণের (শ্রেণীকৃত ঋণ) পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তফসিলি ব্যাংকসমূহের অপরাপর সকল শ্রেণীকৃত ঋণসহ ১০০ কোটি টাকা এবং তদূর্ধ্ব স্থিতি বিশিষ্ট শ্রেণীকৃত ঋণ হিসাবসমূহ নিবিড় তদারকি একান্ত আবশ্যক।
“এই খেলাপি ঋণের হিসাব হিসাবসমূহ তদারকির লক্ষ্যে সকল ব্যাংককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমসডি) প্রধান করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মবল নিয়ে ১০০ কোটি টাকা এবং তার চেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের হিসাব তদারকির লক্ষ্যে ‘স্পেশাল মনিটরিং সেল’ নামক একটি বিশেষ তদারকি সেল গঠন করতে হবে।”
তদারকি সেল ত্রৈমাসিক বিবরণীতে বর্ণিত খেলাপি ঋণ হিসাব আদায় অগ্রগতিসহ যাবতীয় তথ্য স্ব স্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জানাবে। এ ছাড়া ত্রৈমাসিক বিবরণী পরবর্তী মাসের শেষ কর্মদিবসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের টাস্কফোর্স সেলে দাখিল করবে।
এই বিবরণীতে প্রদর্শিত খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা অন্য কোনো কারণে নিয়মিত বলে গণ্য হলেও নিয়মিত হওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৮টি (আট) ত্রৈমাসিক পর্যন্ত তা বিবরণীতে রাখতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ওই বিবরণীর যথাযথ পর্যালোচনা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে ঋণের বকেয়া আদায়ের নিমিত্তে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
পরিচালনা পর্ষদ নিয়মিতভাবে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
আগামী অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০১৯ থেকে এপ্রিল-জুন, ২০২০ ত্রৈমাসিক পর্যন্ত ওই বিবরণীর হার্ড ও সফট (এক্সএল সিট) কপি দাখিল করতে হবে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে।
বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, খেলাপি ঋণ আর ‘এক টাকাও বাড়বে না’।
সেজন্য ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিলসহ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর সে কথা ফলেনি, খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের (রাইট অফ) স্থিতি ছিল ৩৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ যোগ করলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৫০ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ স্থিতিপত্র (ব্যালেন্স শিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন-রাইট অফ বলে। যদিও এধরনের ঋণ গ্রহীতা পুরো টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে।