বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়ান, চীনা ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

পণ্যের বৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়াতে চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশার বেইজিং থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2019, 11:42 AM
Updated : 4 July 2019, 11:42 AM

পাশাপাশি বস্ত্র ও চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

চীন সফররত প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বিকালে বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন অংশীদার চীন। নির্মাণ, গতানুগতিক ও বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা কোম্পানি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার চীনের সঙ্গে এক হাজার ২৪০ কোটি ডলারের বাণিজ্যের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

তবে এই বাণিজ্যের বেশিরভাগই যে চীন থেকে আমদানি, তাও বলেন শেখ হাসিনা।

এসময় চীনে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ৬৯ কোটি ৫ লাখ ডলার, যা দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ১০ শতাংশেরও কম। আর সদ্য বিদায়ী গত অর্থবছরের ১১ মাসে চীনে রপ্তানি হয়েছে ৭৮ কোটি ডলারের পণ্য।

চীনের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আশা করব, রপ্তানিযোগ্য পণ্যবৈচিত্র্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে সামনের দিনগুলোতে আপনারা বাংলাদেশ থেকে আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবেন।

“এছাড়া বিনিয়োগেরও অনেক খাত আছে। বিশেষ করে বস্ত্র ও চামড়ার মতো শিল্প খাত এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশলের মতো মাঝারি ও ভারী শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন।”

চীনে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, মাছ ও কাঁকড়া, প্লাস্টিক পণ্য, ফুল, সবজি, ফল, মসলা ও তামাক। বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত চামড়ার ৬০ শতাংশের বেশি চীনে রপ্তানি হয়। অপ্রক্রিয়াজাত চামড়ারও বড় একটি অংশ যায় দেশটিতে।

চীনের বাজারে এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (আপটা) আওতায় ৮৩টি পণ্যে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় আরও প্রায় ৫ হাজার পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাকসহ দেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্য অন্তর্ভুক্ত না থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে না।

তবে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে ‘জিরো ট্যারিফ স্কিম’ নামে একটি সুবিধা চালু করার কথা রয়েছে, যাতে দেশটিতে রপ্তানিযোগ্য ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। এখন ৬৫ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ।

গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে চায়না কাউন্সিল ফর প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি)।

বেইজিংয়ে সিসিপিআইটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে চীনের ২৬টি বড় কোম্পানি ও করপোরেশনের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিসিপিআইটি চেয়ারপারসন ও চায়না ইন্টারন্যাশনাল কনট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফ্যাং কুইচেন, চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ কোম্পানির চেয়ারম্যান গান বাইছিয়ান, চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন গ্রুপের ওভারসিজ অপারেশনের প্রেসিডেন্ট কাও বাওগাং, গ্রুপের চায়না স্টেইট কনট্রাক্টরস ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জু ইয়ং, হুয়াওয়ে টেকনোলজিস করপোরেশনের কোম্পানির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জেং চেংগাং প্রমুখ।

বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স- বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান, এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাকিম আশরাফ ও সিদ্দিকুর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চীনের উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। তারা বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, বিদ্যুৎ, নির্মাণশিল্পসহ বেশ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
গোলটেবিল বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিসিপিআইটি চেয়ারপারসন ও চায়না ইন্টারন্যাশনাল কনট্রাক্টরস অ্যাসোশিয়েশনের চেয়ারম্যান ফ্যাং কুইচেন।

শেখ হাসিনা সিসিপিআইটি পরিদর্শন বইতেও সই করেন।