‘করের বোঝা থামিয়ে দেবে’ টেলিকমের অগ্রগতি

প্রস্তাবিত বাজেটে ‘করের বোঝা’ চাপিয়ে দেওয়ায় টেলিকম খাতের অগ্রগতি থমকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2019, 01:41 PM
Updated : 26 June 2019, 01:41 PM

বুধবার ঢাকার লা ভিঞ্চি হোটেলে ‘টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এই আশঙ্কার কথা জানান।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সিমের উপর কর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা এবং মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্মার্টফোনের আমদানি শুল্কও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। 

গোলটেবিলে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “একটা ধারণা আছে, জিপি প্রফিট করছে আমাদেরও প্রফিট করা উচিত। প্রফিট করা কোনো গুনাহ না। পলিসি মেকারদের দায়িত্ব আমরা জিপির মতো কেন প্রফিট করব না, তা নিশ্চিত করা।”

টেলিকম খাত এখন দুরবস্থায় আছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে, এয়ারটেল টিকতে পারেনি, প্রচুর লস দিয়ে এক্সিট করতে হয়েছে। সিটিসেল ন্যাচারাল ডেইথে চলে গেছে। টেলিটকের সাথে রাষ্ট্র আছে, সেজন্য সারভাইব করে গেছে, যেটা আমরা বলি আইসিইউতে আছে।

“তিনটা কোম্পানি আছে, এই তিন কোম্পানি প্রফিট করতে পারবে না, এটা কিন্তু ভালো জিনিস না। তিনটির মধ্যে আরেকটি কোম্পানি ন্যাচারাল ডেথে যদি যায়, তাহলে এই ইন্ডাস্ট্রির কী অবস্থা হবে?”

মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক নিয়ে মাহতাব বলেন, “২০১৬ সালে প্রায় ৬৬০ কোটি টাকা লস হয়েছিল। সফল মার্জারের পর এবং ফোরজি চালুর মাধ্যমে প্রফিট দেখা শুরু করেছিলাম। কোয়ার্টার ওয়ানে প্রফিট দেখিয়েছি, আমরা ৫০-৬০ কোটি টাকা প্রফিট করতে পারব যদি কারেন্ট রেট মেইনটেন করতে পারি ২০১৯ সালে।

“এই বাজেটে মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হবে ১৫০ কোটি টাকা। প্রফিট করার পরেও নেট লস গুণতে হবে ১০০ কোটি টাকা। এটা কীভাবে যৌক্তিক হতে পারে, আমার বোধগম্য না।”

“২১ বছর ব্যবসা করার পরেও মুনাফা করার চেহারা দেখছি না। যখনই স্বপ্ন দেখি তা কোনো একটা অ্যাকশনের মাধ্যমে আটকে যাচ্ছে। বুঝতে হবে আসলেই পরিস্থিতি খুব খারাপ। এটা পলিসি মেকারদের অনুধাবন করতে হবে,” বলেন মাহতাব।

গোলটেবিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মেফতাহ উদ্দিন খান বলেন, সিম কর ১০০ থেকে ২০০ টাকা করায় তা এই খাতের বিকাশে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনে করেন না।

“অনেকের পকেটে  পাঁচটি সিমও থাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো ইফেক্ট পড়বে না।”

স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্মার্টফোনের বিষয়ে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা দেশে উৎপাদনের জন্য সুবিধা চাইছে। স্মার্টফোনের সুবিধা চেয়ে কুফলও দেখা যাচ্ছে। সাধারণ লোকজনের কাছে টেলিডেনসিটি বাড়াতে খুব বেশি স্মার্টফোনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করি।”

মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার বিষয়ে এনবিআরের এই সদস্য বলেন, “গ্রামীণফোন প্রফিট দেয়, তা সরকার পায়, জনগণ পায়। মিনিমাম ট্যাক্স করা হয়েছে কারণ টার্নওভার বাড়ছে।”

গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, “এই খাতের মধ্যে আমরাই প্রথম পুঁজিবাজারে গিয়েছি। এজন্য করপোরেট ট্যাক্সের উপর ১০ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়া হবে। পুঁজিবাজারে যাওয়ার তিন বছরের মাথায় কর রেয়াত ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে অন্য কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে যেতে নিরুৎসাহিত হবে।”

বাংলালিংকের হেড অব ট্যাক্স সারোয়ার হোসেন খান বলেন, “সরকারের এ ধরনের পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে আয়করের দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত।”

টেলিটকের ডিজিএম সাইফুর রহমান খান বলেন, “টেলিকম খাতে বিভিন্ন কর ও শুল্ক আরোপের ফলে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে আমাদের মতো ছোট কোম্পানির টিকে থাকা কঠিন হবে।”

অ্যামটবের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল টি আই এম নুরুল কবির বলেন, “টেলিকম খাতে ১০ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বের কোথাও নেই। সেই সঙ্গে সিম ট্যাক্স এই খাতের প্রবৃদ্ধিকে থামিয়ে দিচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগকারী এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন হচ্ছে, তা খুঁজে বের করা দরকার।”

মোবাইল ফোন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই খাত থেকে করের বোঝা কমানো উচিত। টাকা আদায় করা সহজ বলেই এখানে কর আরোপ করা হয়। জনগণের জন্য সহায়ক হয় এমন কর আরোপ করা উচিত।”

টিআরএনবি এর সভাপতি মুজিব মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপু অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।