বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীতে বৃহস্পতিবার ইউএস ট্রেড শো-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টিপু মুনশি বলেন, “এটি (জিএসপি) ভাবমূর্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি ফিরে পেলে আমাদের নতুন একটি ভাবমূর্তি গড়ে উঠবে।”
অনুষ্ঠানে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারও ছিলেন।
২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও পরের বছর রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) এর আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়।
এর আগে পর্যন্ত ‘জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি)’ আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারত।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধায় বাংলাদেশ যে পণ্য বিক্রি করত, তা দেশের ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানির ১ শতাংশের মতো। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এই সুবিধা পায় না।
জিএসপি স্থগিতের পর ওয়াশিংটন জানায়, কারখানাগুলোর কর্ম পরিবেশের উন্নতি এবং শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগসহ ১৬টি শর্ত পূরণ হলে তবেই এ সুবিধা ফেরত দেওয়া হবে।
এরপর থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ এই সুবিধা পুনরায় পেতে সরকারের বিভিন্ন তৎপরতায় বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেযোগ্য উন্নতি হলেও এখনও যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়নি।
বিষয়টি নিয়ে আগের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, বাংলাদেশ আর এই সুবিধা আশা করে না। এর কোনো প্রয়োজনও নেই। এ ব্যপারে যুক্তরাষ্ট্রকে আর বলা হবে না বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
“আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর জিএসপি সুবিধা চাই না কারণ আমরা যত উন্নতিই করি না কেন তারা এটা আর আমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে না,” বলেছিলেন তোফায়েল।
বাংলাদেশকে জিএসপি না দেওয়ার পেছনে ‘রাজনৈতিক’ কারণ রয়েছে বলেও একবার মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তবে নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশকে জিএসপি ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করবেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত মিলার, যিনি গত নভেম্বরে ঢাকায় দায়িত্ব নিয়েছেন।
“আমি খুবই আশাবাদী ভবিষ্যতে বিষয়টির সমাধান হবে,” বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
১৯৯২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সঙ্গে মিলে ইউএস ট্রেড শো’র আয়োজন করে আসছে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম)।
একসময় দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন ডলারের হলেও এখন তা আট বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এবারের আয়োজনে ৪৬টি প্রতিষ্ঠান ৭৪টি বুথে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা এবং ভিসা বিষয়ক দু’টি সেমিনারও হবে।
এবছরের প্রদর্শনীতে যেসব নতুন প্রতিষ্ঠান যোগ দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডায়াগনস্টিক অটোমেশন ইনকরপোরেশন, প্যারাসাউন্ড, দ্য কেলগ কোম্পানি এবং অ্যাপল।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মিলার দুই দেশের মধ্যে পারষ্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিলে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চমানের পণ্য ও সেবা বাংলাদেশে প্রদর্শনের এবং বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান রাখার ভালো সুযোগ হচ্ছে ট্রেড শো।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানিতে ২০১৮ সাল উল্লেখযোগ্য ছিল মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২৬তম বার্ষিক ট্রেড শো এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যেকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক একটা ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে।”
আর্ল মিলার জানান, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ বেড়ে দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
আর গত দশ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে আট দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী এবং একক রপ্তানিকারক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান ধরে রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।