বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের কর পরিশোধে অস্বচ্ছতা: এনবিআর

দেশের বড় অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী কর পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2019, 01:59 PM
Updated : 13 March 2019, 01:59 PM

বুধবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ তুলে তিনি রাজস্ব আদায়ে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতাও চেয়েছেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বহুজাতিক ও বিদেশি বড় কোম্পানিগুলো থেকে তারা ঠিকমতোই রাজস্ব পান।

“এরকম আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানও আছে। কিন্তু সাম অব দি বিগ ইনস্টিটিউশনস … তাদের পেছনে আমাদের ঘোরাফেরা করতে হয় ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় করার জন্য।”

সরকারের পাওনা পরিশোধে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন মোশাররফ।

তিনি বলেন, “এখানে দেশের অনেক বড় বড় ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত আছেন, যারা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চালান। আমাদের লোকজন (এনবিআরের কর্মকর্তা) সেখানে গিয়ে রেইড করা কিংবা আপনাদের কাছ থেকে হিসাব- কিতাব চেয়ে আনা, কম্পিউটার সিজ করা এসব কিছুরই প্রয়োজন হবে না, যদি নিয়মিত পাওনা আমাদের পরিশোধ করে দেয়।”

ঢাকার মতিঝিলে এমসিসিআই কার্যালয়ে এই সভায় এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির এবং এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বক্তব্য রাখেন।

ব্যবসায়ী নেতারা কোম্পানির লভ্যাংশের উপর এনবিআরের দুইবার কর আরোপ করার পাশাপাশি বলেন, কর হার বেশি বলেই বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না।

নিহাদ কবির বলেন, “আমাদের উন্নয়নের জন্য রাজস্ব বাড়ানোর কথা যেমন সত্য, তেমনি ব্যবসায়ীদের উপর বিশেষ করে লভ্যাংশের ওপর দুই বার কর কাটা হচ্ছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স অনেক বেশি।”

কর হার কমিয়ে আওতা বাড়ালে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য ব্যবসায়ীদের আরও ৬ মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়ার দাবিও এনবিআরকে জানান এমসিসিআই সভাপতি।

মোশাররফ বলেন, “বন্ডেড ফ্যাসিলিটি যেসব প্রতিষ্ঠান পায়, বিশেষ করে গার্মেন্টস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, পেপারস কেমিকেলস, ইদানিং আমাদের কিছু লোকজন ধারাবাহিকভাবে বাইরে থেকে জিনিসপত্র এনে বিক্রি করে দিচ্ছে বাজারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

“এগুলো যদি বন্ধ না হয়, তাহলে তো দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা জেনুইন ব্যবসায়ী তাদেরকে যদি সঠিকভাবে কাজ করতে না দেয়, তাহলে ক্ষতি হবে। এগুলোর জন্য জিরো টলারেন্স। আপনারাও আমাদের সহায়তা করবেন।”

এনবিআরের কাছ থেকে ‘রিফান্ড’ পেতে কোনো সমস্যা হলে সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন মোশাররফ।

তিনি বলেন, “বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে সিনিয়র এবং ওল্ডেস্ট। কিন্তু আমি কখনও কাউকে দেখাই না যে আমি খুব বড় অফিসার। আমার সাথে যে কেউ কথা বলতে পারেন। আপনারা যে কোনো সমস্যার জন্য আগে আমার কাছে আসেন, আপনাদের সমস্যা সমাধান হয় কি না দেখেন।”

বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য আমার মনে হয় আমাদের ব্যবস্থা ভালোই আছে। কিন্তু কিছু প্রসিডিউরের সমস্যা আমাদের আছে। যেমন- বিভিন্ন অফিস আদালত, বিশেষ করে ডুয়িং বিজনেস।

“ট্যাক্স এক্সাম্পশন এবং ট্যাক্স হলিডে এগুলো কিন্তু খারাপ না। এছাড়াও ইকোনমিক জোন, বেজা, বেপজা এসব প্রতিষ্ঠানেও ভালো ব্যবস্থা আছে।”

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এই ভ্যাট আইন ২০১২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করার কথা। সর্বশেষ দুই বছর পেছানো হয়। এখন আগামী ১ জুলাই থেকে এই আইনটি বাস্তবায়ন করতে চাই।”