ফারমার্সের নাম-গন্ধ মুছে ফেলতে চান এমডি

নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সব কিছু নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2019, 04:46 PM
Updated : 30 Jan 2019, 05:27 PM

চালু হওয়ার বছর তিনেকের মধ্যেই ঋণ কেলেঙ্কারিতে আলোচনায় আসে বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর বুধবার এর নাম বদলেও পদ্মা ব্যাংক করা হয়েছে।

ওই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বুধবার রাতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এক বছরে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছি। নতুন নামে সেই আস্থার জায়গা আরও জোরদার করতে চাই।

“আমরা এখন নতুন নামে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করব। কলঙ্কমুক্ত করতেই পরিচালনা পর্ষদ ‘ফারমার্স ব্যাংক’ নাম বদলে দিয়ে ‘পদ্মা ব্যাংক’ করার অনুরোধ জানিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা অনুমোদন দেওয়ায় এখন আমরা ব্যাংকটিকে বিভিন্ন কালার দিয়ে একটা রেইনবো সৃষ্টি করব।”

তিনি বলেন, নতুন নাম পাওয়ার পর বুধবার রাতে পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে। সভায় নতুন বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে নতুন বছরের পরিকল্পনা। তাতে মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালুসহ নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হবে।

ফারমার্স ব্যাংকের শাখা এখন ৫৪টি

“এসবের মধ্য দিয়ে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে নিয়ে আসা হবে। মানুষ যাতে ‘ফারমার্স’ নাম ভুলে যায় সে ব্যবস্থা করব আমরা। পদ্মা ব্যাংককে মানুষের আস্থার ব্যাংকে পরিণত করা হবে।”

প্রাইম, ন্যাশনাল, প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে এমডির দায়িত্ব পালন করে আসা এহসান খসরু বলেন, সংকটে পড়ার পর এতদিন ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বন্ধ ছিল। আগামী জুন থেকে নতুন করে ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বোর্ড সভায়।

“এক বছরে আমরা অনেকটাই গুছিয়ে এনেছি। এখন আমানতকারীরা টাকা জমা রাখছেন, গ্রাহকরা টাকা পাচ্ছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”

এই বছরের মধ্যেই ‘বেশিরভাগ’ খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে। ব্যাংকের একটি নিবেদিত টিম রয়েছে, যারা গ্রাহক ও শাখাসমূহের সমন্বয়ে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে।”

ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর যারা সময় ও চুক্তির নিয়ম মেনে টাকা পরিশোধ করেনি তাদের থেকে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংকের দক্ষ একটি কর্মীবাহিনী কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান এহসান খসরু।

“ব্যাংকিং সেবার মান বাড়ানো, খেলাপি ঋণ আদায়, নতুন আমানত সংগ্রহ আর নিরাপদ ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিতে নতুন নামে নতুন উদ্যমে কাজ করা হবে,” বলেন তিনি।

২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। যাত্রার তিন বছরেই ধুঁকতে থাকা ফারমার্স ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়মের জন্য ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতাদের দায়ী করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

২০১৬ সালে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম দেখে ফারমার্স ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চাপের মুখে গত বছরের শুরুতে চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে হন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সমস্য মহীউদ্দিন খান আলমগীর।

ফারমার্স ব্যাংকের ৬০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক এখন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ।

ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপে ডুবতে থাকা এই ব্যাংকটির বেশিরভাগ শেয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং আইাসিবি কিনে নয়।

খেলাপি ঋণ আদায়ের পাশাপাশি নতুন আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যে শনিবার বেসরকারি ব্যাংকটির ‘রিকভারি সম্মেলনে’ বক্তব্য দেন এমডি এহসান খসরু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফত। অন্যদের মধ্যে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হাসান তাহের ইমাম, উপব্যবস্থাপক মো. আলী জারিয়াব বক্তব্য দেন।