আ. লীগের সমাবেশের দিনে দর্শনার্থী কমেছে বাণিজ্য মেলায়

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও শনিবার বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থী সমাগম বিক্রেতাদের আশানুরূপ হয়নি, আওয়ামী লীগের জনসভার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2019, 04:27 PM
Updated : 19 Jan 2019, 07:33 PM

শনিবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর নাগাদ মেলা প্রাঙ্গণে দর্শণার্থীর সংখ্যা কম ছিল। তবে বিকাল ৩টার পর থেকে ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকে।

গত ৯ জানুয়ারি মেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত দিন শুক্রবারও লাখো দর্শনার্থীর ঢল নামে বাণিজ্য মেলায়। সেই তুলনায় এদিন মেলায় দর্শনার্থী হয় অনেক কম।

মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের ‘বিজয় উৎসবকে’ কারণ মনে করছেন মেলার টিকেট বিক্রেতা রুবাইয়াত ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে গতকালের তুলনায় দর্শনার্থী অনেক কম। গত শুক্রবারের তুলনায় শনিবার ভিড় কিন্তু বেশি ছিল। কিন্তু আজ ভিড়টা অনেক কম। বিকাল ৩টা থেকে ভিড়টা আবার বেড়েছে।

“আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসবের কারণে যানবাহন কিছুটা কম ছিল, আবার যানজটের কথা চিন্তা করে অনেকেই হয়ত বের হননি। দর্শনার্থী কম হওয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ হতে পারে।” 

একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সাফল্য উদযাপনে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিজয় উৎসব’ করে আওয়ামী লীগ। এ কারণে ওই এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করায় যানজট তৈরি হয় বাংলামোটর-কারওয়ানবাজার এলাকায়।

মেলায় আসা অধিকাংশ ক্রেতাই ভিড় করছেন নিত্য ব্যবহারের জিনিসপত্র, নানা অফার দেওয়া খাবারের স্টল, তৈরি পোশাক ও বিদেশি পণ্যের স্টলগুলোতে।

মেলায় ঢুকতেই ভিড় দেখা যায় দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের স্টলে। এই স্টলে বিক্রি হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের বিভিন্ন আকারের হাড়ি, কড়াই, গ্লাস, চামচ, জগ, বাসনসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য। সেগুলো ‘ফিক্সড প্রাইসে’ বিক্রি হচ্ছে।

 

এ স্টলের বিক্রেতা আরিফ জানান, প্রতিদিনই তাদের স্টলে বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতারা ভিড় করছেন এবং বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী কিনছেন।

“আমাদের থাই অ্যালুমিনিয়ামের চাহিদাটা বেশি। আর দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবাই তাদের পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন।”

তিনি জানান, তারা থাইল্যান্ডের পণ্যগুলো আমদানি করেন আর দিল্লি থেকে কাঁচামাল এনে চট্টগ্রামে তাদের নিজস্ব কারখানায় তৈরি করেন এসব তৈজসপত্র।

থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, বিছানার চাদর, নকশী কাঁথা, শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন- মুড়ি, মুড়কি, খই, নাড়ু, বাতাসা, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, তিলের খাজা, পাপড়সহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি হচ্ছে ‘জয়িতা’র স্টলে।

অন্যবারের মতো বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানান এ স্টলের একজন উদ্যোক্তা উম্মে হাবিবা।

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে সব দেশীয় পণ্য, নকশাওয়ালা চাদর, কাঁথা, থ্রি-পিস, শাড়ি বিক্রি করছি। কিন্তু ক্রেতারা অনেক দামাদামি করছে। হাতের কাজের জিনিসের দাম তো একটু বেশিই হয়। কিনছে খুব কম ক্রেতাই, বিক্রির অবস্থা একদম খারাপ।”

লটারিতে দোকান না পাওয়ায় ৫ লাখ টাকায় দোকান নিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমেদ।

তিনি মাইকিং করে ‘ডিসকাউন্টে’ মেয়েদের ওয়ান পিস পোশাক বিক্রি করছেন।

‘একটি পোশাক ৫০০, তিনটি নিলে ১২০০’ বলে মাইকিং করে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তিনি।

বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন বলেন, “বিক্রির অবস্থা একদম খারাপ, লাভ তো দূরের কথা, চালান ওঠে কি না সন্দেহ। এ জন্যই তো ডিসকাউন্টে বিক্রি করছি, তারপরও তো কাস্টমার পাচ্ছি না।”

মেলায় বিভিন্ন পণ্যে রয়েছে অফার ও ডিসকাউন্ট। আর অফার দেওয়া পণ্যের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা।

এছাড়াও মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন আসবাবের দোকানগুলো এনেছে নতুন সামগ্রী ও ছাড়।

তবে মেলায় পণ্যের দাম বেশি এবং বিভিন্ন বিদেশি স্টলে দেশীয় পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে অভিযোগ ক্রেতাদের।

মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভার্সিটিতে থাকতে আমরা মেলায় বন্ধুদের নিয়ে আসতাম অনেক কৌতূহল নিয়ে। দেশি-বিদেশি পণ্যের সমাহার ছিল, এমনকি পণ্যের দামও কম ছিল।

“আর এখন নিউ মার্কেট বা গাউসিয়ায় যে পণ্যগুলো আমরা পেয়ে থাকি, সেগুলোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, আবার বিদেশি পণ্যের স্টলগুলোতে বেশিরভাগই দেশি পণ্য, বিদেশি বলে চালানো হচ্ছে।”

মেলার খাবারের মান ও দাম দুটি নিয়েই অভিযোগ এই দর্শনার্থীর।

“মেলায় তো মানুষ একটু রিল্যাক্সের জন্য আসে। ঘুরতে, খাওয়া-দাওয়া করবে। কিন্তু এখানে খাবারের দোকানগুলোতে বাড়তি দাম নিচ্ছে। ১০০ টাকার হাফ বিরিয়ানি বিক্রি করছে ১৭০ টাকায়। আবার মানসম্মত খাবারও দিচ্ছে না।”

এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে নজর দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

মেলায় কেনাকাটা করতে আসা রুবিনা ইসলামও জানান বাড়তি দামের কথা।

তিনি বলেন, “একসাথে অনেক পণ্য কেনার জন্যই তো মেলায় আসা। অথচ বাইরের দোকানগুলোর চেয়ে এখানে দাম বেশি। তবে কিছু কিছু দোকান অফার দিচ্ছে।”

মেলায় দেশীয় পর্যটনকে তুলে ধরার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোর তথ্য দিচ্ছেন আগ্রহীদের।

পর্যটন করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা (জনসংযোগ) শঙ্কর কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলায় প্রচুর দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী আসে। তাদের দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা এবং দেশের পর্যটনকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্যই আমরা মেলায় স্টল নিয়েছি।”

মেলায় স্টলের পাশাপাশি রয়েছে বিনোদন পার্ক। আর এ পার্কে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরাও।

ম্যাজিক বোর্ড, ওয়ান্ডার হুইল, হানি সুইং, ট্রেন, কিডস্ রাউডস্, ৯ডি মুভির ব্যবস্থা রয়েছে এ বিনোদন কেন্দ্রে।