‘ফ্রোজেন ফুড’ নামে পরিচিত এসব খাবার কাটা-ধোয়ার ঝামেলা ছাড়াই কেবল তেলে ভেজে সরাসারি পরিবেশন করা যায়।
ঝটপট ব্র্যান্ড নাম দিয়ে ২০১৩ সালে হিমায়িত খাদ্যের বাজারে আসে দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রাণ। বাজারে প্রাণের ঝটপট ব্রান্ড ছাড়াও ব্র্যাক চিকেন, গোল্ডেন হারভেস্ট, কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, রিচ ফুড, এজি গ্রুপসহ অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রোজেন ফুড’ বিপণন করছে।
সম্প্রতি নরসিংদী ঘোড়াশালে প্রাণ ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেডের কারখানা পরিদর্শন করে দেখা যায়, পরোটা, শিঙারা, সমুচা, রুটি, চিকেন স্প্রিং রোল, চিকেন নাগেট, চিকেন পেটি, চিকেন সসেজ, পুরি, পপকর্ন, স্ট্রিপস, ফ্রেঞ্চফ্রাইসহ বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে সেখানে। কচুর লতি, সবজি, কচুমুখীসহ আরও কিছু পণ্য হিমায়িতকরণ পদ্ধতিতে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থাও আছে কারখানায়।
ঝটপট ব্র্যান্ডের প্রোডাকশন ম্যানেজার মো. হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোক্তাদের হাতে স্বাস্থ্যকর পণ্য তুলে দিতে প্রাণ নিজেদের নির্ধারিত সরবরাহকারীর কাছ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে। রপ্তানিমুখী ঝটপট ফ্রোজেন ফুডস আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলে। এরই মধ্যে বিআরসি, আইএসও সনদ অর্জন করেছে ঝটপট ফ্রোজেন ফুডস।
হাবিবুর জানান, প্রাণের হিমায়িত খাবারের বেশিরভাগটাই রপ্তানি হয়। দেশীয় চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ যোগান দেয় প্রাণ।
তার ধারণা, দেশের ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে এই খাতের আকার বছরে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় শতকোটির টাকার মতো বিদেশে রপ্তানি হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিশ্বের ৪৮টি দেশে ৬০ লাখ ৫৪ হাজার ১৩০ ডলার সমমূল্যের হিমায়িত খাবার রপ্তানি করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ৫৫টি দেশে এককোটি ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩১ ডলার। সেই হিসেবে একবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮৫ শতাংশ।
প্রাণের ফ্রোজেন ফুড বিভাগের অপারেশন ম্যানেজার রাসেল রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হিমায়িত খাদ্যের বাজারে ঝটপট ফ্রোজেন ফুডসের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার রিটেইল ও সুপার স্টোরগুলোতে ঝটপট ফ্রোজেন ফুড পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ৩ হাজার রিটেইল ও সুপার স্টোরে ঝটপট ফ্রোজেন ফুডস কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
রাসেল জানান, ২০১৪ সালের শুরুর দিকে ঝটপট ব্র্যান্ডের পণ্য কানাডাসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি শুরু হয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ইটালি, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে প্রাণের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
“শুরুর দিকে মাসে মাত্র ৪ কনটেইনার (গড়ে ২৫ টন) পণ্য রপ্তানি হতো। এখন প্রতি মাসেই ৮/১০ কনটেইনার ফ্রোজেন ফুড যাচ্ছে। গত মাসে গেছে ৭টা কনটেইনার। চলতি মাসে ১০টা কনটেইনার যাচ্ছে। আর আগামী মাসে ১৪টা কনটেইনার রপ্তানি হওয়ার কথা রয়েছে।”
২০০২ সালে নাগেট, মিটবল, সিঙ্গারা, সমুচা নিয়ে স্বল্প পরিসরে বাজার আসে ব্র্যাক চিকেন। শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত নাস্তার চাহিদার জোগান দেওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিদেশে রপ্তানি না করে দেশের বাজারকেই গুরুত্ব দিচ্ছে ব্র্যাক চিকেন।
“শহরাঞ্চলের সুপারশপগুলোকে কেন্দ্র করে ব্র্যাক চিকেন বিপণন করছে। এছাড়া কেএফসি, পিজাহাটসহ কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুত করা মাংস সরবরাহ করছি আমরা।”
২০১৬ সালে প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাদ্যপণ্য বাজারে যুক্ত হয় উদীয়মান কোম্পানি আহসান গ্রুপের এজি ফুড। সিঙ্গারা, পরোটা, সমুচা, মুরগির মাংসের তৈরি বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এজি ফুডের অ্যাসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. রফিকুল আলম জেমি জানান, “দেশের বাজারে বড় শহরগুলোতে বিভিন্ন সুপার শপে তাদের পণ্যগুলো বিক্রি হয়। কর্মব্যস্ত মানুষজন তাদের খাবার তৈরির ঝামেলা কমাতে দিনে দিনে ফ্রোজেন আইটেমের দিকে ঝুঁকছেন।”
এছাড়া এজি ফুডের নিজস্ব ৭০টি আউটলেট রয়েছে বলেও জানান তিনি।
“বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবসা দিনে দিনে বাড়ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে এজি ফুডের পণ্য।”