মঙ্গলবার শেষ বেলায় পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে বলে হাটের বেপারীদের অনেকের চোখেমুখে দেখা গেছে হতাশার ছাপ।
কুষ্টিয়া থেকে আফতাবনগর পশুর হাটে আসা গরুর বেপারী আব্দুল হালিম বলেন, “যে গরু গতকাল ৫০ হাজার টাকা দর উঠেছিল, সেটি আজকে সকালে ৪৫ হাজার টাকা দিতে চাইল, তারপর দুপুরে আরও কমে ৪০ হাজার টাকা বলছে।"
তিনি বলেন, ছয় মাস আগে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে যে গরুটি তিনি কিনেছিলেন, সোমবারও হাটে ক্রেতারা ওই গরুর জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিতে চাইছিরেন। কিন্তু মঙ্গলবার দর পড়তে পড়তে মঙ্গলবার দুপুরে ৮০ হাজার টাকার বেশি কেউ দিতে চাইছেন না।
এবার ১৩টি গরু নিয়ে হাটে এসেছিলেন জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, “এখনও দুইটা গরু বিক্রি বাকি। শেষ বেলায় এসে বিপদে পড়ে গেলাম।”
এবার হাটের শুরু থেকেই ক্রেতারা বেশি দাম চাইছেন বলে অভিযোগ করে আসছিলেন ক্রেতারা। তার মধ্যেও গত দুই দিনে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা হয়।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতীয় গরু না আসায় শেষ মুহূর্তে পশুর সঙ্কটে দাম আরও বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় অনেকেই সোমবার একটু বেশি দামেই গরু কিনে ফেলেছেন। কিন্তু সোমবার রাতে ঢাকার হাটগুলোতে নতুন করে প্রচুর পশু আসায় দাম পড়ে যেতে শুরু করে।
মঙ্গলবার সকালেও ঢাকার গাবতলী, মেরাদিয়াসহ অন্যান্য হাটে ট্রাকে করে কোরবানির গরু আসতে দেখা গেছে। সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম।
আফতাবনগরে একটি গরু দেখিয়ে ঝিনাইদহ থেকে আসা বেপারী আতিয়ার রহমান বলেন, “এই গরুর দাম এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। গতকাল এক লাখ ২০ হাজার উঠছিল, আজকে দাম বলে মাত্র ৮০/৮৫ হাজার।"
নাটোর থেকে আসা গরু বেপারী আব্দুর রহিম বলেন, “১৭টি গরু এনেছিলাম। রাত পোহালে ঈদ, কিন্তু এখনও ছয়টা বিক্রি হয়নি। গতকাল যে তিনটা গরুর জন্য দুই লাখ ৩৫ হাজার দাম উঠেছিল, সেটা আজকে দুই লাখ ২০ হাজার দাম বলছে।"
সাত বছর ধরে ঢাকায় গরু বিক্রি করছেন জানিয়ে রহিম বলেন, "ইন্ডিয়ান গরু না আসার পরও কেন দাম কমে গেল তা বুঝতে পারছি না, নাকি মানুষের হাতের অবস্থা খারাপ?”
এই বাজারে কোরবানির পশু কিনতে আসা বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বলেন, “এক ঘণ্টা ধরে বাজারে ঘুরছি, দাম তেমন চড়া মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আশানুরূপ গরু কিনতে পারব। আর কিছুক্ষণ বাজার যাচাই করে তারপর কিনে নেব।"
আফতাবনগর পশুর হাট কর্তৃপক্ষ মাইকে কিছুক্ষণ পর পর পশু বেপারীদের উদ্দেশে বলছিল- “বেপারী ভাইয়েরা, হতাশ হবেন না, আপনাদের গরু সব বিক্রি করে যেতে পারবেন।"
কিন্তু দুপুরের পর কয়েকজন বেপারীকে বাজার থেকে গরু ট্রাকে তুলে ফিরে যেতে দেখা যায়।
এ হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ আলী মঙ্গলবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে প্রচুর পশু আছে, কিন্তু ক্রেতা নাই। ক্রেতা না থাকায় দামও কমে গেছে।”
দাম পড়ে যাওয়ায় বিক্রেতারা হতাশ জানিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, “বিকেলে যদি বাজার ওঠে তবে কিছুটা হলেও তারা পোষাতে পারবে। নইলে লোকসান গুনতে হবে।”
বাজারে ক্রেতা সঙ্কটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বরাবরই ঈদের এক-দুইদিন আগে পশু কেনাবেচা ভাল হয়। সোমবার দিনে কেনাবেচা ভাল হয়েছে। আজও কেনাবেচা ভাল হতে পারে এমনটা ভেবেই রাতে প্রচুর পশু বাজারে ঢুকেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না।”
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বলেন, দৌলতপুর থেকে তিনজন মিলে ২২টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছিলেন তারা। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অর্ধেক গরুই বিক্রি হয়নি।
কুষ্টিয়া থেকে আসা আরেক বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, “৬৭টা গরু নিয়ে এসেছিলাম। প্রথম দিন দুইটা, গতকাল পাঁচটা ও আজকে সাতটা গরু বিক্রি করেছি। প্রতিটা গরু অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে, কারণ হাটে লোকজন নাই। আগে কোনো ঈদে এরকম হয়নি।”
গাবতলী হাটের খাসি নিয়ে আসা মো. আলম বলেন, “হাটে আজ লোক অনেক কম। তাই যত দামে বিক্রি করব ভেবেছিলাম, সেটা পারিনি। তারপরও রাত পর্যন্ত দেখব, যদি ক্রেতা পাওয়া যায়।”
বিক্রেতারা হতাশার কথা বললেও গাবতলীর হাটে আসা এক ক্রেতা বললেন তার ধীরে চলো নীতির কথা।
শ্যামলী থেকে এ হাটে আসা ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদ বলেন, “হাটে এবার যথেষ্ট গরু আছে। তারপরও বেপারীরা গতবারের চেয়ে বেশি দাম চাইছেন। তাই সময় নিয়ে গরু কিনব।”
আর মিরপুর থেকে আসা জিয়াউর রহমান আশা করছেন, ঈদের আগের রাতে দাম আরও কমবে, তখনই তিনি কিনবেন।