মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সন্মেলনে নতুন এই ঋণ চালুর ঘোষণা দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “বাংলাদেশে এ ধরনের গৃহঋণ এটাই প্রথম। অভিনব এই সেবা বাংলাদেশে মর্গেজ লোনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনবে এবং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করবে।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বলছে, তাদের এই নতুন ধরনের ঋণে লোন অ্যাকাউন্টটি গ্রাহকের অন্য একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ওই কারেন্ট অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা থাকবে, তার ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রাহক পাবেন বাড়তি সুবিধা।
প্রচলতি গৃহ ঋণের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে তার পুরো ঋণের অপরিশোধিত অংশের ওপর সুদ দিতে হয়। কিন্তু ‘মর্গেজ ওয়ান’ এর ক্ষেত্রে গ্রাহকের সুদ হিসাব করা হবে তার অপরিশোধিত ঋণ এবং কারেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পার্থক্যের ওপর।
এক্ষেত্রে মোট অপরিশোধিত ঋণের সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত কারেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা টাকার সঙ্গে সমন্বয় হতে পারে বলে জানানো হয় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সংবাদ সম্মেলনে।
ওই কারেন্ট অ্যাকাউন্টের টাকা গ্রাহক যে কোনো সময় তার প্রয়োজন অনুযায়ী তুলে নিতেও পারবেন।
মর্গেজ ওয়ানে একজন গ্রাহক কতটা লাভবান হতে পারেন, উদাহরণের মাধ্যমে তার একটি চিত্র দেখানোর চেষ্টা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বলা হচ্ছে, একজন গ্রাহক যদি বার্ষিক ১০ শতাংশ সুদে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেন এবং মাসে ১ লাখ ৬ হাজার ২৩৫ টাকা কিস্তিতে ৬০ মাসে পুরো ঋণ পরিশোধ করেন, তাহলে সাধারণ হোম লোনে তাকে সুদ হিসেবে দিতে হবে মোট ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ১১৩ টাকা।
আর কোনো গ্রাহক যদি মর্গেজ ওয়ানে ওই ঋণ নেন এবং তার কারেন্ট অ্যাকাউন্টে যদি সব সময় সাড়ে ১২ লাখ টাকা জমা থাকে, তাহলে শেষ পর্যন্ত তাকে সুদ হিসেবে দিতে হবে মোট ৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৯ টাকা। প্রতি মাসে একই পরিমাণ কিস্তি দিয়েও তার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে ৫৬ মাসে।
এই হিসাব দেখিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বলছে, মর্গেজ ওয়ানে গ্রাহকের মাসিক কিস্তিতে সাশ্রয় হবে ৭ শতাংশ, আর মোট সুদ পরিশোধে সাশ্রয় হবে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মর্গেজ ওয়ানের সুদের হার ঠিক হবে ওই সময় ব্যাংকের চালু রেট অনুযায়ী। অ্যাপার্টমেন্টের দামের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ঋণ হিসেবে দেবে। আর এই পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ এক কোটি ২০ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধে গ্রাহক সর্বোচ্চ ২৫ বছর সময় পাবেন।
“বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার। আর এ দেশের গ্রাহকদের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর বাংলাদেশ হল ষষ্ঠ দেশ, যেখানে মর্গেজ ওয়ান চালু করল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
বিজয় বলেন, ওই দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের বড় ধরনের পার্থক্য আছে। হংকং বা সিঙ্গাপুরে অনেকেরই এক বা একাধিক বাড়ি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এখন প্রথমবারের মত বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট কিনছেন।
এই সংখ্যা সামনে আরও বাড়বে এবং সেই সঙ্গে মর্গেজের বাজারও বড় হবে বলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহীর বিশ্বাস।
১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে শাখা খোলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ২০০০ সালের অগাস্টে তারা বাংলাদেশে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের ব্যবসা কিনে নেয়, যে ব্যাংকটি ১৯০৫ সাল থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
এই হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড নিজেদেরকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ব্যাংক হিসেবে দাবি করে থাকে। আর আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসেবেও বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের কার্যক্রম সবচেয়ে বিস্তৃত।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডই প্রথম আন্তর্জাতিক ব্যাংক যারা ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছিল এবং এলসি খুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি পুনরুদ্ধার এবং মুদ্রা বিনিময় হার ঠিক করার ক্ষেত্রেও সে সময় সহযোগিতা করেছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
এ ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং) বিটপী দাশ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।
“আমরা মনে করি, গৃহঋণ আর ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন একটি উত্থানের পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এখানে মর্গেজ মার্কেটেরও দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।”