উদ্যোক্তারা ব্যর্থ মেধার অভাবে: মোস্তাফা জব্বার

মেধার অভাবকেই দেশের উদ্যোক্তাদের ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2018, 12:15 PM
Updated : 8 July 2018, 12:15 PM

রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’র উদ্ভাবনী ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্লাটফর্ম ‘আর-ভেঞ্চারস’র কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নিজের উদ্যোগ ও মেধা কাজ না করলে কোনো কিছুই কাজ করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের ব্যর্থ হওয়ার কারণ অর্থের অভাব না, আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে তার নিজের মেধার অভাব।

“সে যদি নিজের মেধা গড়ে তুলতে পারে তাহলে আশপাশের সমস্ত কিছু গড়ে তোলা সম্ভব। আমার চারপাশের যতজনকে দেখেছি- অর্থের কষ্টের চেয়ে বড় কষ্ট হয়ে যায়, যখন সে তার নিজের মেধাটাকে নিয়ে সামনে যাওয়ার মত পথ তৈরি করতে পারে না।” 

ইইএফ ফান্ডের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “ফান্ডের নিয়মটা ছিল অর্ধেক উদ্যোক্তা দেবে বাকি অর্ধেক সরকার দেবে। ওইখানে গিয়ে দেখেছি প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগের ক্ষেত্রে আমাদের যারা উদ্যোক্তা তারা বিজনেস প্ল্যান তৈরি করতে পারে না, ক্যাশফ্লোটা কি হবে তা চিন্তাই করতে পারে না।”

মন্ত্রণালয় অনেক দিন থেকেই স্টার্টআপ কালচার গড়ার চেষ্টা করছে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমরা উদ্ভাবন করছি, উদ্যোগ গ্রহণ করছি কিন্তু মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত করার চেষ্টা করছি না। আমার মন্ত্রণালয়ে দেখছি শত শত প্রস্তাব আসছে, শত শত গবেষণা কাগজ আসছে, প্রকল্প তৈরি হচ্ছে, কেউ চিন্তা করে নাই তার মেধাস্বত্ব কোনো না কোনোভাবে সংরক্ষিত করা উচিত।”

রবির উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “কোন প্রতিষ্ঠানকে দেখিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উদ্যোক্তা বানানোর চেষ্টা করছে, এজন্য রবিকে ধন্যবাদ জানাই।”

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবি’র আর্থিক সহায়তা, ব্যবস্থাপনাগত পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করে কোম্পানির সাত কর্মকর্তা।

অপারেটরটির উদ্ভাবনী ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরির প্লাটফর্ম ‘আর-ভেঞ্চারস’র আওতায় নিজ নিজ ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করলেন তারা।

অনুষ্ঠানে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

এরা হলেন- রবি’র ডিজিটাল সার্ভিস ম্যানেজার মোহাম্মাদ আব্দুল হাদি ভূঁইয়া, ইনফরমেশন টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আশিক নূন, এন্টারপ্রাইজ প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মাদ মোহসিউল হক, মার্কেট অপারেশন্সের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল ফারহান মিঠুন, ম্যানেজার মো. হাসিবুল করিম, মার্কেট অপারেশন্সের স্পেশালিস্ট রিয়াসাত চৌধুরী এবং নেটওয়ার্ক অ্যাসুরেন্সের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান।

আগামী ১২ মাস তারা ব্যবসায়িক ধারণাগুলো বাজারে আনতে কাজ করে যাবেন। বাছাই করা ছয়টি ধারণা বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেকটির জন্য এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থায়ন করবে রবি।

সাফল্যের সাথে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা শুরু করবেন; হয়ে উঠবেন নিজের ডিজিটাল ব্যবসার সিইও।এই ১২ মাস নিয়মিত বেতন ভাতাদিসহ সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন উদ্যোক্তারা এবং এসময় রবিতে তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বও পালন করতে হবে না।

সাতজন উদ্যোক্তার নিজ নিজ কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করবে রবি। সফলতার সাথে এই স্তর শেষ করার পর তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা শুরু করবেন। এইসব কোম্পানিতে রবিও মালিকানার একটি অংশ নেবে। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক ধারণা টেকসই হলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাত থেকে অর্থায়নের আগ্রহকে স্বাগত জানাবে রবি।

প্রাথমিকভাবে ২১২টি ব্যবসায়িক ধারণা জমা দিয়েছিলেন রবি’র কর্মকর্তারা। কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া শেষে দ্বিতীয় পর্বের জন্য ৫০টি ধারণা বাছাই করা হয়। ৫০টি থেকে সেমিফাইনাল পর্বে যায় ১৫টি ধারণা। এরপর চূড়ান্তভাবে ছয়টি ধরাণা বাছাই করা হয়েছে যেগুলো বাস্তবায়নের জন্য এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন সংশিষ্ট উদ্যোক্তারা।

অনুষ্ঠানে রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, এ উদ্যোগের ফলে রবিতে আধুনিক, কর্মতৎপর ও ডিজিটাল কাজের সংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হবে। শিগগিরই দেশের প্রাণবন্ত তরুণদের আর-ভেঞ্চারস প্লাটফর্মের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনাও আছে।”

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর এবং মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোনিয়া বশির কবির অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন।