গ্যাসে ইভিসি মিটার ৩ বছরেও বসেনি, ক্ষোভ শুনানিতে

গ্রাহকের সঠিক বিল নির্ধারণে তিন বছরের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক গ্যাস ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার স্থাপনের আদেশ থাকলেও সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2018, 05:38 PM
Updated : 21 June 2018, 05:38 PM

২০১৫ সালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ওই আদেশ দেওয়ার তিন বছরের মাথায় কমিশনেরই একজন সদস্যও বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য আরও অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম এবং কোম্পানিগুলোর বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধি নিয়ে বিইআরসির গণশুনানিতে এভাবে সময় বাড়ানোর বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।

শুনানিতে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, “আদেশ দেওয়ার আগে তিন বছর পরে এসে বলা হচ্ছে, ইভিসি মিটার স্থাপন করতে পাঁচ বছর দরকার হবে। কিন্তু এই সময়ে বিতরণ কোম্পানি গুলোও বিইআরসিকে এ বিষয়ে অবহিত করেনি।

“এমনকি সময়ে সময়ে এসব বিষয় অবহিত করার কথা থাকলেও বিতরণ কোম্পানি তা থেকে বিরত থেকেছে। এখন এসে এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত।”

এর আগে শুনানিতে বিইআরসির সদস্য আব্দুল আজিজ খান বলেন, “তিন বছরে এ ধরনের আদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ ধরনের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য অন্তত পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “ইভিসি মিটার বিভিন্ন দেশে সুফল বয়ে আনেনি। এছাড়া বাণিজ্যিক সংযোগে ইভিসি মিটার ব্যবহার করা যায় না।”

শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইভিসি মিটার স্থাপনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের প্রকৃত ব্যবহারভিত্তিক বিল প্রনয়ন করতে হবে। বাণিজ্যিক ছাড়া অন্য বড় ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ইভিসি মিটার স্থাপন করা জরুরি।

কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির একজন সদস্য উদাহরণ হিসেবে বলেন, “কোন ক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার সময় ধরা যাক ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস দেওয়ার অঙ্গিকার করলো বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু যেহেতু গ্যাসের সংকট রয়েছে, তাই ওই গ্রাহক সব সময় ১৫ পিএসআই থেকে কম চাপে গ্যাস পায়। কোন কোন সময় চাপের পরিমান ২/৩ পিএসআইতে নেমে আসে।

“কিন্তু বিতরণ কোম্পানি যখন সাধারণ মিটারে বিল করে তখন সার্বক্ষণিক চাপ ১৫ পিএসআই ধরেই করে থাকে। এক্ষেত্রে গ্রাহক যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে তার অতিরিক্ত বিল প্রদান করে। কিন্তু ইভিসি মিটার থাকলে গ্রাহক যে চাপে গ্যাস পাচ্ছে ওই চাপেই বিল আসার কথা।”

বিইআরসির চলমান গণশুনানির শেষ দিনে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের উপরে আলোচনা হয়।

সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ মার্জিন ২০১৮-১৯ এ প্রতি ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ১৬২৫ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করে কারিগরি কমিটি। এখন এই বিতরণ মার্জিনের পরিমান শূন্য দশমিক ২৯৫৩ টাকা।

একই সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ চার্জ একই সময়ের জন্য কারিগরি কমিটি ঘনমিটার প্রতি শূন্য দশমিক ১০৩৫ টাকা করার সুপারিশ করেছে। কোম্পানিটির বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ২৫০০ টাকা।

এলএনজি আমদানির প্রেক্ষিতে সরকারের আহ্বানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি করছে। বছরের শুরুর দিকে সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে।

এরপর জ্বালানি বিভাগের বেঁধে দেওয়া হারে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো। এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম ১৪২ থেকে ১৪৩ ভাগ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বিইআরসির কারিগরি কমিটি।

একই সঙ্গে প্রত্যেকটি কোম্পানির বিতরণ মার্জিনও বৃদ্ধির পক্ষেও সায় দিয়েছে কমিশনের কারিগরি কমিটি।

সরকার প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমাদানির হিসেব ধরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও কমিশন মনে করছে, এলএনজি আমদানি আগামী বছর জুন পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৪৫৬ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি হবে না।