বাজেট বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই

প্রস্তাবিত বাজেটকে ভালো-খারাপ বলে মন্তব্যে না গিয়ে এটি বাস্তবায়নই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2018, 10:15 AM
Updated : 9 June 2018, 10:15 AM

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে শনিবার ঢাকার মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এফবিসিসিআই।

সংগঠনের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটের অনেক কিছুই আছে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো। আবার যে দিকগুলোতে ব্যবসায়ীদের আপত্তির সুযোগ আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা সরকারে উচ্চ মহলের সঙ্গে বসে আলোচনা করে ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করব।

“তাই এই বাজেটকে ভালো-খারাপ বলে মন্তব্য করেতে চাই না। অন্যদের মতো গরিব মারার বাজেট কিংবা উচ্চাভিলাষী বাজেটও আমরা বলতে চাই না।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এটা বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৫ শতাংশ এবং মূল বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি।

বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারার উপর জোর দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকের মান নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।”

বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার যে ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে সরকারের দৃষ্টি চেয়েছেন শফিউল মহিউদ্দিন।

“ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেসরকারি খাতে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যাতে প্রতিবন্ধকতা বা বাড়তি চাপ সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন।”

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা হওয়ার পেছনে উচ্চ সুদ হারকে দায়ী করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ব্যাংকখাতের লুটপাটকারীদেরও শাস্তির দাবিও জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

“আমরা বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে লুটপাটকারী ও ডাকাতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আবার ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকে নানান পলিসির কারণে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে পিছিয়ে পড়েছে, তাদের বিষয়ে ন্যায্য চিন্তাভাবনা চাই।”

বাজেট প্রস্তাবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন শফিউল। এছাড়া কয়েক স্তরের কর ব্যবস্থা, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমাদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং চাল আমদানিতে শুল্ক বসানোর প্রশংসা করেন তিনি।

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা (২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা) ধরা হয়েছে, তা আদায় চ্যালেঞ্জের নে করছে এফসিসিসিআই। নতুন করদাতা না পেলে বর্তমান করদাতাদের উপর চাপ বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।

“লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে করদাতাদের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং আইন-কানুনের অপপ্রয়োগ ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতার কারণে ব্যবসায়ীদেরকে হয়রানি করা হয়ে থাকে।”

নানা সুপারিশ

>> ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতেও তালিকাভুক্ত এবং তালিকা বহির্ভূত কোম্পানি কর্পোরেট হার ২.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।

>> পোশাক শিল্পের কর্পোরেট কর ১২ শতাংশ ও সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আগের মতো ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা।

>> তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন সংশ্লিষ্ট পণ্য সরবরাহের সঙ্গে সংযুক্ত খাতে ভ্যাট প্রত্যাহার করা।

>> তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত খাদ্যসহ সকল রপ্তানি খাতের ক্ষেত্রে উৎসে কর .৭০ শতাংশ বহাল রাখা।

করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা করা।

>> আমদানি পর্যায়ে অগ্রীম মূসক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক আগের মতো ৪ শতাংশ বহাল রাখা।

>> যে সব কোম্পানি শুধু ই-কমার্স কোম্পানি হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করছে, তাদের ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান নির্বিশেষে মোট প্রাপ্তির ০.৩ শতাংশের পরিবর্তে ০.১ শতাংশ কর নির্ধারণ করা।

>> রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবচয়ের হার আগের অবস্থায় রাখার পাশাপাশি শুল্কমূল্য নির্ধারণে ট্রেড ডিসকাউন্ট সুবিধা প্রদান।

>> দেশের শিল্প রক্ষায় আমদানিকৃত প্যাকেজিং সামগ্রীর উপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

>> অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার উপর ধার্য করা মূসক প্রত্যাহার।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “আমরা অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের নেতৃবৃন্দের সাথে আরও আলোচনা করে আমাদের যে সমস্ত প্রস্তাব বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি, সেগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের নিকট সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করবো। আমরা আশা করি এ বিষয়ে সরকারের নিকট থেকে ইতিবাচক সাড়া পাব।”

সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ও সহ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফসহ অন্যান্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।