চলার পথে ইফতার

কর্মব্যস্ত নগরীতে কাজ শেষে পথে যানজটে আটকে বাসায় পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ হারান অনেকেই; নিরুপায় হয়ে রেস্তোরাঁয় বা রাস্তার পাশের দোকান থেকে চটজলদি কিছু কিনেই ইফতার সারেন তারা।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 06:38 PM
Updated : 23 May 2018, 06:59 PM

বুধবার রাজধানীর ফার্মগেইট ও কারওয়ানবাজার এলাকায় দেখা যায়, চলতি পথে দলবেঁধে ইফতার করছেন অনেকে। আবার কেউ ছুটছেন রেস্তোরাঁয়।

ফার্মগেইটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি বড় জটলায় ইফতার করছিলেন ৩০-৩৫ জন। তাদেরই একজন পেশায় ক্ষুদে ব্যবসায়ী আক্তার জানালেন, নিয়মিতই এভাবে ইফতার করেন তিনি।

আক্তার বলেন, “আমরা যারা রাস্তায় দোকানদারি করি, ইফতারের সময় যামু কই? এখানেই কেউ টুল নিয়া, কেউ দাঁড়ায় একসাথে ইফতার করি।”

পাশেই ইফতার বিক্রি করছিলেন তানজিলা আক্তার। ইফতার বেচাকেনার ফাঁকেই সেরে নেন নিজেদের ইফতারও ।

তানজিলা আক্তার বলেন, “আমরা দুই বান্ধবী প্রথম রোজা থেকে বাসায় বানানো ইফতার বিক্রি করছি। মোটামুটি ভালো বিক্রি হয়। তবে ইফতারের আগ মুহূর্তে বিক্রি বেশি হয়।”

তাদের দোকানে ৩০ টাকায় ছোলা, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, শাকের চপ পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে ২০ টাকার কাপ ফিন্নিও। এছাড়াও পানি ও রুহ আফজা বিক্রি করছেন তারা।

ফার্মগেইটের রেস্তোরাঁগুলোতেও ইফতারের সময় উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় ।

কাসুন্দি রেস্তোরাঁ, প্রিন্স রেস্তোরাঁ, হোটেল নিউ স্টার অ্যান্ড কাবাব, দারুচিনি রেস্তোরাঁসহ ছোট-বড় সব খাবারের দোকানেই ইফতারের সময় দেখা যায় শেষ মুহূর্তের বাড়তি ব্যস্ততা।

এসব রেস্তোরাঁয় সাধারণ ইফতার পদের বাইরেও বিক্রি হয় খাসির গ্রিল চাপ, খাসির লেগ কাবাব, খাসির লেগ রোস্ট, খাসির হালিম, চিকেন রোস্ট, দই বড়া, নার্গিস কাবাব, কুচুরি, ফুলুরি, চিকেন কাটলেট, চিকেন টোস্ট, পনির সমুচা, নিমকপাড়া, মাটন সমুচা, চিকেন সমুচা, কলিজা সিঙ্গারা, চিকেন কেরাম কাটলেট, চিকেন অনথন, চিকেন ড্রাম স্টিক, ফিশ ফিঙ্গার, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, চিকেন শর্মা কাবাব, চিকেন মাসাল্লাম, চিকেন মালাই কাবাব, চিকেন কাঠি কাবাব, রেশমি কাবাবসহ অন্যান্য আইটেম।

কাসুন্দি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মো. হান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইফতারে অন্যান্য আইটেমের বাইরে ১৫০, ২৫০, ৩০০ ও ৪০০ টাকার চারটি সেট মেনু বিক্রি করছেন তারা।

তিনি বলেন, “বিক্রি ভালো হচ্ছে। ইফতারের সময় এত কাস্টমার আসে যে, বসার জায়গা দিতে পারি না।”

ইফতারে সর্বোচ্চ ৭৬০ টাকা পর্যন্ত আইটেম বিক্রি করছে হোটেল নিউ স্টার অ্যান্ড কাবাব।

এই হোটেলের ম্যানেজার নুর হোসেন বলেন, “এখনো তেমন চাপ শুরু হয়নি, মার্কেট জমলে আরও বেশি ভিড় হবে।”

তিনি বলেন, “অনেকেই কেনাকাটা করে বাসায় যাওয়ার সময় পান না। তারাই এখানে বেশি ইফতার করেন।"

এ রেস্তোরাঁয় ইফতার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদ আহমেদ জানান, হাতে সময় কম থাকায় ইফতার করতে এখানে এসেছেন।

ঈদ সামনে রেখে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা আর পথের হালচাল নিয়ে তিনি বলেন, “বসুন্ধরায় কেনাকাটার পর বাসে উঠি। পরে মনে হল তালতলায় গিয়ে ইফতার করতে পারব না। তাই ফার্মগেইটে নেমে ইফতার করছি।”

কারওয়ানবাজার এলাকা ঘুরেও দেখা যায় একই চিত্র। ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে অনেকেই রাস্তায় ও ফুটপাতে ইফতার বিক্রি করছেন।

ইফতার বিক্রেতা সৌরভ বলেন, “ইফতারের আগ মুহূর্তে ভালোই বিক্রি হয়। বাসে উঠেও বিক্রি করি, যারা গাড়িতে ইফতার করেন তারা নেন।"

যানজট ঠেলে কখন পৌঁছাবেন সেই অনিশ্চয়তায় বাসেই ইফতার সেরে নিতে হয় ইমরান হোসেনকে।

তিনি বলেন, “সদরঘাট যেতে যেতে ইফতার মিস হয়ে যাবে। সে কারণে পানি ও কিছু ছোলা-বুট সঙ্গে নিয়ে নিয়েছি।”