রপ্তানি ধরে রাখতে পণ্যের মানে হতে হবে আপসহীন: আমু

দেশের রপ্তানি বাজার আরও বাড়াতে সব ধরনের পণ্যের গুণগত মানে আপসহীন থাকতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2018, 02:19 PM
Updated : 20 May 2018, 02:19 PM

বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উপলক্ষে রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এর মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

মন্ত্রী বলেন, “মানসম্মত পণ্য তৈরি করতে না পারলে বিশ্ববাজারে আমাদের অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তাই পণ্যের মান যাতে অক্ষুণ্ন থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। আবার পণ্যের মান যাচাইয়ে জড়িত ব্যক্তিদেরও নির্ভুল থেকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।”

ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন, বিপণন বন্ধে এবং ওজন ও পরিমাপে কারচুপি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে বিএসটিআইকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান শিল্পমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ভেজাল পণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আক্রান্ত করবে। তাই জনস্বার্থে যে কোনো ধরনের অনিয়ম ও নিম্নমানের পণ্য ও সেবার বিরুদ্ধে আপসহীন ভূমিকা পালন করতে হবে।”

শিল্পমন্ত্রী বলেন, যে কোনো পণ্য উৎপাদন কিংবা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাপ ও মানের কাঁচামাল ব্যবহার করা জরুরি। এর ব্যত্যয় হলে, উৎপাদিত পণ্য জননিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।

“আমাদের দেশে যে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা হয় এগুলোতে যদি ভেজাল ও নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা পুরো জাতির জন্যই হুমকি। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যে ফাটল দেখা দিয়েছিল তা হয়েছে কেবল সেই সময়ে যারা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের গফিলতি ও নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারের কারণে।”

দেশে ভেজালবিরোধী প্রবণতা তৈরিতে ইসলামী দলগুলোকেও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান শিল্পমন্ত্রী।

“ওজনে কাম দেওয়া কিংবা ভেজাল মেশানো ইসলাম ধর্মেও নিষিদ্ধ। আমাদের দেশে অনেক ইসলামী দল। অথচ যারা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন তারা এ নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। শুধু রাজনীতি না করে তাদের ভেজালবিরোধী জনসচেতনাও সৃষ্টি করা উচিত।”

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এনামুল হক বলেন, বিএসটিআইতে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ন্যাশনাল মেট্রোলজি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এনএমএল-এর ছয়টি ল্যাবরেটরি অ্যাক্রেডিটেশন বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আরও ল্যাবরেটরি অ্যাক্রেডিটেশনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

বিএসটিআই মহাপরিচালক সরদার আবুল কালাম বলেন, বিএসটিআই এর ল্যাবরেটরি, প্রোডাক্টস সার্টিফিকেশন সিস্টেম এবং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সার্টিফিকেশন ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে । ফলে বিএসটিআইয়ের মান সনদ এখন আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে।

আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব মেট্রোলজি সম্মেলনে পরিমাপের সাতটি মূল এককের মধ্যে চারটিতে পরিবর্তন করা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে পরিমাপের একককে আরও সূক্ষ্মভাবে পরিমাণ করা যাবে। হিসাব-নিকাশ আরও নির্ভুল হবে।

“বিএসটিআইএর মূল কাজ মান ও সেবার মানোন্নয়ন। ভবিষ্যতে ঘনীভূত প্রকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) পরিমাপের যন্ত্র ও স্বর্ণকে না ভেঙে বা অক্ষুণ্ন রেখে এর মান যাচাইয়ের যন্ত্র চালু করা হবে।”

বিসিক চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসান মোহাম্মদ ইফতিখার, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান, বিএসটিআইএর পরিচালক (মেট্রোলজি) মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মেট্রোলজি হল পরিমাপের বিজ্ঞান। বিজ্ঞানসম্মত পরিমাপপদ্ধতি প্রবর্তন করে বিশ্বজুড়ে অভিন্ন একক চালুর চেষ্টায় ১৮৭৫ সালের ২০ মে ১৭টি দেশ মেট্রিক কনভেনশনে সই করে, যার স্মরণে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে মেট্রোলজি দিবস পালন করা হয়।

সেই মেট্রিক পদ্ধতির আধুনিক সংস্করণ হল আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি-এসআই। এখন প্রতিদিনের সব পরিমাপের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক একক হিসেবে অ্যাম্পিয়ার (বিদ্যুৎ ইউনিট), কেলভিন (তাপমাত্রা), সেকেন্ড (সময়), মিটার (দৈর্ঘ্য), কিলোগ্রাম (ভর), ক্যান্ডেলা (উজ্জ্বলতা) ও মোল (রাসায়নিক যৌগে যে কোন মৌলের পরিমাণ) ব্যবহার করা হয়।     

আর প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতেই প্রতি বছর পালন করা হয় বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস।