মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
নারায়ন চন্দ্র বলেন, “আমরা রপ্তানির দিকে যেতে চাচ্ছি এই কারণেও যে আমাদের ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা রয়েছে। সেজন্য আমরা কিছুটা রপ্তানি করতে চাই।”
২০১২ সালের ১ অগাস্ট থেকে ইলিশসহ সব মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরে ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ইলিশ ছাড়া অন্য সব মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
সরকার ইলিশ মাছ রপ্তানি বন্ধ রাখলেও অবৈধভাবে তা পাচার হচ্ছে জানিয়ে নারায়ন বলেন, “এতে রাজস্ব থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয়। আমরা যদি রপ্তানি করি, তাহলে ওপেন পথটা করে দেওয়া যায়, গোপনে যাওয়ার পথটা তখন অনেকটা সঙ্কুচিত হয়ে যায়।”
“বড় মাছ বাজারে আনতে হলে গোপন পথটি বন্ধ করতে হবে, আমাদের সদর পথটি চালু করতে হবে।”
রপ্তানি হলেও মা ইলিশ সংরক্ষণে গত কয়েক বছর ধরে সরকার যে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।
“আমরা ডিম ছাড়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি, জাটকা নিধন বন্ধ রাখার প্রকল্প চলবে। ইলিশ মাছের বিচরণ ক্ষেত্রগুলোও সংরক্ষিত রাখা হবে।”
উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের দাদনের হাত থেকে রক্ষায় তাদের সাবলম্বী করে তুলতে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে এবং গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করতে গবেষণা চলছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩ দশমিক ৯৫ লাখ টন। আর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ টন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়, তার ১১ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের মত।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায়, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে ইলিশের বিভিন্ন প্রজাতির বিচরণ কমলেও সরকারের বিভিন্ন সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের আবেদনে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর গতবছর ইলিশকে বাংলাদেশের ‘ভৌগলিক নির্দেশক’ (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ইলিশের ব্র্যান্ডিং ও শনাক্তকরণ সহজ হবে।
আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দেশে দুধের ঘাটতিও পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমরা পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৎস্য ও প্রাণিজ আমিষ, দুধ, ডিমসহ সকল ক্ষেত্রে অতিদ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চাই।”
মাংসের দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ব্রয়লার মুরগির দাম কম। চেষ্টা করছি অন্যগুলো (মাংসের দাম) নিয়ন্ত্রণে আনতে। উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়। এই খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দাম কমবে।”
একদিনের মুরগির বাচ্চা কেনাবেচায় ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে নারায়ন চন্দ্র বলেন, “তারা বসেছে। একদিনের বাচ্চার দাম ন্যায্য পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।”
দেশে পর্যান্ত সংখ্যক গরু উৎপাদন হওয়ায় বিদেশে থেকে আপাতত আর আমদানির পরিকল্পনা নেই বলে জানান প্রাণিসম্পাদমন্ত্রী নারায়ন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের দেশীয় উৎপাদন যদি চাহিদা মেটাতে পারে তাহলে বিদেশ থেকে কেন (গরু) আমদানি করব? আমদানি হলে খামারীরা মার খাবে, সেটা নিশ্চয়ই করব না। বাইরে থেকে আনার কোনো প্রয়োজন নেই। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, তিনিও বলেছেন এখন (গরু) আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না।”
সরকার কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করতে পারছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “নতুন জাতের গরু এনেছি, যাতে এক হাজার কেজি পর্যন্ত মাংস হয়। এগুলো দিয়ে সারা বছর মাংসের চাহিদা মেটানো হবে। কোরবানির দিনে যে পরিমাণ পশু লাগে সারা বছর ওই পরিমাণ পশু দরকার হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্যও তুলে ধরেন মন্ত্রী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মাকসুদুল হাসান খান ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।