প্রতিবন্ধীদের চাকরি মেলা

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের কাজের দক্ষতা ও সামর্থ্যের বিষয়ে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানাতে রাজধানীতে চাকরি মেলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2017, 03:44 PM
Updated : 9 Dec 2017, 03:44 PM

শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই চাকরি মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন), ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশন এবং অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

মেলায় প্রতিবন্ধীদের নিয়োগে আগ্রহী এমন ২০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে জীবন বৃত্তান্তসহ অংশ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন প্রায় ৫০০ জন চাকরি প্রার্থী।

আয়োজকরা জানান, প্রতিবন্ধী জনবলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, তাদের দক্ষতা ও সামর্থ্যের বিষয়ে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবহিত করা এই মেলার প্রধান উদ্দেশ্যে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমুলক কর্মসংস্থান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য।

ফাইল ছবি

সাক্ষাৎকারের পর মেলা চলাকালীন সময়েই প্রায় একশ আবেদনকারী নিয়োগপত্র পেয়েছে জানিয়ে তারা বলছেন, তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই মেলায় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে পরে বাছাই করা পছন্দের প্রার্থীদের কাছে নিয়োগপত্র পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে।

মেলায় চাকরির আবেদন করতে এসেছিলেন মাগুরার কাজী বেলাল। ২১ বছরের এই যুবক ২০১৪ সালে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে স্পাইনাল কর্ড ইন্জুরিতে পড়ে এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন।

তিনি বলেন, “আঘাত পাওয়ার পর তিনি সাভারের সিআরপিতে (সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড) আসেন। মেলায় তিনি সিআরপির পিইইআর কাউন্সেলিং পদের জন্য নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন।”

মেলায় চাকরির খোঁজে আসা ঢাকার গেণ্ডারিয়ার আফরিনা আশরাফ শিশু বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হলে বা পায়ে সমস্যায় পড়েন। ক্র্যাচের ওপর ভর করে চলাফেরা করা আফরিনা ফিন্যান্স মেজর হিসেবে নিয়ে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন।

মেলায় তিনি গ্রামীণফোন, কোস্ট বাংলাদেশ এবং গাজী গ্রুপে জীবন বৃত্তান্ত ও সাক্ষাতকার দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে তাৎক্ষণিক নিয়োগপত্র না দিলেও পরবর্তীতে জানানো হবে বলেছে।

তিনি বলেন, “এ ধরনের চাকরির মেলা করে প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করলে অনেক প্রতিবন্ধী চাকরি করতে আগ্রহী হবেন। অগণিত প্রতিবন্ধী বিশেষ কাজে সাধারণ সুস্থ্য মানুষের মতোই চাকরি করতে সক্ষম।”

প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ দেওয়ার আগ্রহ থেকেই মেলায় অংশ নেওয়া বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোনের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইমরান।

তিনি জানান, বিকাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে মেলা প্রাঙ্গণেই তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। পরবর্তীতে বাচাই করা প্রার্থীদের নিয়োগপত্র পাঠানো হবে।

এদিকে মেলার অন্যতম আয়োজক অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লার বলেন, “বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১০ সালের খানা ব্যয় জরিপ ও ২০১৫ সালের জরিপে ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের কারণে দেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যার সঠিক তথ্য নেই। তবে সকল সক্ষম প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা কাজ করছি।”

মেলায় আয়োজিত এক সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার একটা অংশ নানা ধরনের প্রতিবন্ধী। এই বিশাল অংশকে বাদ দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খান বলেন, “প্রতিবন্ধীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে মেলার হওয়া উচিৎ। বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের জন্য সক্ষমতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা দরকার।”

প্রতিবন্ধীদের জন্য পোশাক খাতের অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অবহেলার পরিবর্তে প্রতিববন্ধীদের অধিকার ও মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তাদের প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বিজিএমইএ। অনেক প্রতিবন্ধী এখন পোশাক শিল্পের অনেক কারখানায় কাজ করছে।