পণ্য পরিবহনে সমস্যা কাটেনি, গ্যাস সঙ্কট তীব্র: বিজিএমইএ

বন্দর ব্যবস্থাপনা ও পণ্য পরিবহনে গতি আনতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও এ ক্ষেত্রে সঙ্কট কাটেনি বলে অভিযোগ করেছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2017, 05:17 PM
Updated : 20 Oct 2017, 06:12 PM

এছাড়া সম্প্রতি গাজীপুর ও সাভার এলাকায় পোশাক কারখানাগুলোতে গ্যাস সঙ্কট তীব্র হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে সরকার চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব বন্দর সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা লিড টাইম কিছুটা কমিয়েছে।

“তবে প্রকৃত তথ্য হলো পণ্য পরিহন সঙ্কট এখনও কাটেনি। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা যুগের চাহিদা অনুযায়ী বাড়েনি।”

বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনা থাকার কারণে পোশাক শিল্পের প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমদানি করা কাঁচামাল খালাসে ১০ থেকে ১৫ দিন বেশি লাগছে বলে অভিযোগ করেন বিজিএমইএ সভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকুর বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ১৫ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

“কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, এখনও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে দৈনিক ৩-৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।”

গ্যাস সংকট নিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি এলাকায় গ্যাস সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই এলাকাগুলোর সাড়ে তিনশ পোশাক কারখানা গ্যাসের সংকটে উৎপাদন করতে পারছে না।”

অ্যাকর্ডের চলে যাওয়ার রূপরেখা

রানা প্লাজা ধসের পর কারখানা সংস্কারে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড এবং আমেরিকান ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়েছিল। তখন থেকে ক্রেতা জোট দুটি গত সাড়ে চার বছরে সরকার ও বিজিএমইএর সঙ্গে মিলে কাজ করেছে।

পরবর্তীতে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় যে কারখানাগুলো অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তালিকাভুক্ত নয়, সেগুলো সংস্কারের জন্য সরকার, বিজিএমইএ ও আইএলও মিলে রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) গঠন করে। আরসিসির আওতাধীন কারখানাগুলোর সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশে আর কাজ করার প্রয়োজন নেই বলে সরকার ও পোশাক মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন।

ইতোমধ্যেই অ্যাকর্ড ৮০ ভাগের বেশি কাজ শেষ করেছে। অ্যালায়েন্স বলছে, আগামী সাত মাসের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবে।

এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইএলও, ইন্ড্রাস্টিঅল ও ইউনিগ্লোবালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের দুইজন মন্ত্রী, বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইয়ের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকে ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার রূপরেখা তৈরি হয়।

মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পর যে প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে অ্যাকর্ড বাংলাদেশ থেকে তাদের কাজ গুটাবে, তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি।

>> অ্যাকর্ড নিরাপত্তা সংস্কারের ফলো-আপ কাজটি একটি সম্মত মানদণ্ডের ভিত্তিতে জাতীয় উদ্যোগ অর্থাৎ রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন (আরসিসি) সেলের কাছে হস্তান্তর করবে।

>> তারপরও অ্যাকর্ড সরকারকে অনুরোধ করেছে, বাংলাদেশে তাদের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য। তবে এসময় তারা বর্তমান নামের পরিবর্তে ‘ট্রানজিশনাল অ্যাকর্ড’ নামে কাজ করবে।

>> এ প্রক্রিয়ায় শ্রম মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন, ব্র্যান্ড এবং আইএলও প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। মনিটরিং কমিটি রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের কাছে অ্যাকর্ডের দায়িত্ব হস্তান্তর কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে। আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে মনিটরিং কমিটির প্রথম সভা হবে।

>> মনিটরিং কমিটি ত্রেতা জোটের মেয়াদ শেষে সংস্কার অব্যাহত রাখতে সরকার গঠিত রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) কার্যক্ষমতা যাচাই করার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে।

>> মনিটরিং কমিটি ছয় মাসের মধ্যে পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ সরকার ও অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের কার্যক্ষমতা সংক্রান্ত প্রথম প্রতিবেদন এবং ২০১৮ এর মে মাস এর শেষের দিকে এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে।

>> বাংলাদেশ সরকার, অ্যাকর্ড স্বাক্ষরকারীরা এবং সব স্টেক-হোল্ডার যারা অ্যাকর্ড হওয়ার পর থেকেই কাজ করছে, তারা যদি রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) কাজের বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়, তাহলে ‘ট্রানিজশনাল অ্যাকর্ড' পরবর্তী ছয়মাসের মধ্যে তাদের সব দায়িত্ব ও কাজ আরসিসির কাছে হস্তান্তর করে তাদের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করবে।

>> ট্রানজিশনাল অ্যাকর্ডের যে কার্যবিধি লেখা থাকবে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা নিরূপন করার জন্য বিজিএমইএর অংশগ্রহণে ‘ট্রানজিশনাল অ্যাকর্ড'র সাথে একটি পৃথক অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হবে।