মাঝারি শিল্প খাতের ঋণেও মিলবে ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি’ সুবিধা

সিএমএসএমই খাতে ২৫ হাজার থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 05:59 AM
Updated : 11 August 2022, 05:59 AM

অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পাশাপাশি মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে তাদের জামানতবিহীন মেয়াদী ঋণকে ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’ সুবিধায় আনা হল।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ২৫ হাজার থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’ সুবিধা পাওয়া যাবে। এই নির্দেশনা বুধবার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে শুধু অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির (সিএমএস) শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) বাবদ দেওয়া ঋণ ও মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’ সুবিধা পেত।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জামানতবিহীন ঋণ দিতে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বপ্রথম ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের’ নীতিমালা ঘোষণা করেছিল সিএমএস খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য।

২০২০ সালের ২৭ জুলাই ঘোষিত ওই নীতিমালা অনুযায়ী, ক্রেডিট গ্যারান্টি বা ঋণ নিশ্চয়তা সুবিধা শুধু সিএমএস উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধনের (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) জন্য উন্মুক্ত ছিল। মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে পরে মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রেও সে সুবিধা দেওয়া হয়।

এরপর উদ্যোক্তাদের মাঝে অর্থ সরবরাহ বাড়াতে নতুন স্কিম গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৯ জুলাই সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়নে তহবিল গঠন করা হয়। ওই তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া সহজ করতে এখন মেয়াদী ঋণকেও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম সুবিধার আওতায় আনা হল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, সিএমএসএমই খাতের প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক জামানত দিতে তারা সক্ষম হন না।

“ফলে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে সিএমএসএমই খাতে সহায়ক জামানত প্রদানে অক্ষম উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে তাদের যাচিত মেয়াদী ঋণের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডলার সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ব্যাংকের তারল্যে চাপ পড়েছে। উদ্যোক্তারা যাতে ঋণ পেতে পারেন ও বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়ে, সেজন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলটি গঠন করা হয়েছে। কারণ কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে এই সিএমএসএমই খাত।

“ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের ঝুঁকি কমাতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় সিএমএসএমই খাতকে আনা হল, যাতে তারা উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে উৎসাহী হন। আগে শুধু সিএমএস খাত ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা পেত। এখন শুধু বড় শিল্প গ্রুপ বাদে সব উদ্যোক্তা সহজে ঋণ পাবেন।”

বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মহামারীকালে ছোট ঋণ বিতরণে এগিয়ে না আসায় এই স্কিমের আওতায় ঋণের ঝুঁকির ভাগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই তহবিলের প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করছে।

মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ২০২০ সালে ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের জন্য গঠন করেছিল ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল।

ওই তহবিল থেকে সিএমএস খাতে বিতরণ করা ঋণ আদায় না হলে মূল ঋণের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’ থেকে পরিশোধ করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বলা হয়, যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি, তারা এই সুবিধা পাবে না। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এই নিষেধ প্রযোজ্য হবে না।

অর্থাৎ সরকারি কোনো বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যতই হোক না কেন, তারা ছোট ঋণ বিতরণ করলে সেই ঋণ আদায় না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল ঋণের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করবে।

এখন নতুন করে সিএমএসএমই খাতের জন্য গঠিত ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলের বিপরীতে দেওয়া ঋণকে একই সুবিধা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।