বাজারে চিনির বাড়তি দামের ব্যাখ্যা কী?

আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রভাব বাজারে পড়তে মাস খানেক লাগতে পারে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 05:31 PM
Updated : 28 Feb 2023, 05:31 PM

‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসাবে সরকার চিনির দাম বেঁধে দিলেও মাস খানেক ধরে কেজিতে অন্তত ১৩ টাকা করে বাড়তি দামেই পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে।

শুরুতে দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তৎপরতা দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শিথিল হয়ে আসছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে যে দামে পণ্য বিক্রি হয়, তার সাপেক্ষে পাকা রশিদ না দেখাতে পারলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তবে সম্প্রতি সরবরাহ ব্যবস্থার গোড়া থেকেই দাম বাড়তে থাকায় বাড়তি দামের সাপেক্ষে রশিদ দেখাতে পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। প্রায় একই দরে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটের চিনিও।

সবশেষ গত ২৬ জানুয়ারি নির্ধারিত দর অনুযায়ী- প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৭ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।

এর মধ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব বোর্ড থেকে চিনি আমদানিতে বিভিন্ন শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন এই ঘোষণার সারমর্ম হচ্ছে- আমদানি করা অপরিশোধিত প্রতি কেজি চিনির উপর থেকে ৭ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির উপর থেকে ১০ টাকা করে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সোমবার কাওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা বাবলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিল থেকে প্রতি কেজি চিনি কিনতে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা খরচ পড়ে যায়। ১ টাকা লাভে তারা কারওয়ান বাজার থেকে চিনি ছাড়েন।

“মিল কিংবা পাইকারি পর্যায়ে চিনি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দাম একটু বাড়তি। কী কারণে বাড়তি, সেটা তো আমরা বলতে পারব না,” বলেন বাবলু।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভ্যাট কমানোর ঘোষণার পর মিল থেকে চিনির দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে এসও পর্যায়ে দাম কিছুটা ডাউন। যারা মিল থেকে প্রতি কেজি ১০৮ টাকা দরে চিনি কিনেছিল, তারও ১/২ টাকা কমে চিনি ছেড়েছে।”

সিটি গ্রুপ তীর ব্র্যান্ডে, মেঘনা গ্রুপ ফ্রেশ ব্র্যান্ডে, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ইগলু ব্র্যান্ডে চিনি বাজারজাত করে। এছাড়া টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ বাজারে চিনির ব্যবসা করে।

চিনির বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহাকে মঙ্গলবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমানকে ফোন করা হলে তিনিও ধরেননি।

দাম কেন ঊর্ধ্বমুখী?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য উপায়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আবারও চিনির দাম বাড়াতে চাচ্ছেন মিল মালিকরা। তবে নতুন করে আবার দাম বাড়ানোর পক্ষে নেই সরকারি সংস্থাগুলো।

ট্যারিফ কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, রিফাইনারি মালিকরা দাম সমন্বয়ের একটি আবেদন দিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু সেটা নিয়ে এখনও পর্যালোচনা শুরু হয়নি।

“চিনির দাম বাড়ানো এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তারা দাম বৃদ্ধির নতুন দাবি নিয়ে এসেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী যেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটাও ঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আরেকটি আবেদন আসলেই তা সাথে সাথে আমলে নেওয়ার কারণ নেই,” বলেন এই কর্মকর্তা।

চিনি আমদানি শুল্ক কমানোর প্রভাব কেমন হবে, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, শুল্ক কমার পর উৎপাদন খরচ যতটা কমবে, তার হিসাব মার্চের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে। ফলে এপ্রিল মাসে মূল্য পর্যালোচনার সময় সেটা বিবেচনায় আসবে। কারণ, সাধারণত আগের এক মাসে আমদানি করা পণ্যের ব্যয় বিচেনায় নিয়ে দাম পর্যালোচনা করা হয়।

কী করছে ভোক্তা অধিকার?

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি শুরু হওয়ায় ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে কিছু ধারাবাহিকভাবে অভিযান ও জরিমানা করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে মিল থেকেই বেশি দামে চিনি আসতে থাকায় এক পর্যায়ে সেই অভিযান সীমিত করা হয়।

এখন সারাদেশের মুদি দোকানগুলোতে নির্বিঘ্নেই প্রতি কেজি চিনি ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই। ভ্যাট বা শুল্ক কমানোর পর নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হয়নি। আবার এই ভ্যাট কমানোর পণ্য বাজারে আসতে এক মাসের অধিক সময় লাগবে, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।”