যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কিচ্ছু কিনব না: প্রধানমন্ত্রী

“এতে সংকট আর ভয়ের কী আছে? আমরাতো কারও উপর এই রকম নির্ভরশীল না এখন,” বলেন সরকারপ্রধান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 01:02 PM
Updated : 15 May 2023, 01:02 PM

বাংলাদেশের ওপর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশের কাছ থেকে কেনাকাটা না করার জন্য সরকারি ক্রয়বিধিতে নতুন ধারা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আমি আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলে দিচ্ছি, আমাদের কেনাকাটা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি, এখন থেকে আমরা যে বিদেশ থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করি, সেখানে আমাদের একটা ক্লজ থাকবে যে, যারা আমাদেরকে স্যাংশন দেবে, তাদের থেকে আমরা কোনো কিছু কেনাকাটা করব না।’

সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান সরকারপ্রধান।

বাংলাদেশের ওপর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে কিছু না কেনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “পরিষ্কার কথা, এতে সংকট আর ভয়ের কী আছে? আমরাতো কারও উপর এই রকম নির্ভরশীল না এখন।”

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।

এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা অচিরেই উঠে যাবে বলে তার আশা।

তবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র জেফ রাইডেনাওয়ার পরদিন জানান, বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে আসায় র‌্যাবের প্রশংসা করলেও এই বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কোনো সময়সীমার ইঙ্গিত দেননি ডনাল্ড লু।

শনিবার এক অনুষ্ঠানে কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ধারণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ তিন দেশে ১৫ দিনের সফর নিয়ে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মলনে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

ক্রয়বিধিতে নতুন ধারা যুক্ত করার আগেই এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কেনাকাটা সংক্রান্ত দুটি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান।

কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, “আমাদের উপর যারা স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে কিচ্ছু কিনব না। পরিষ্কার কথা। এর মধ্যে দুটা অ্যাকশন আমি নিয়েছি, আগেই।”

কোন কোন ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বলব না আমি সব তথ্য। সাংবাদিকরা খবর না রাখলে আমি কেন বলব।

“তাতে কি হয়েছে? আমার কিচ্ছু হয়নি।”

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদেরকে কী কারণে স্যাংশন দিল? যাদেরকে দিয়ে আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম, যাদেরকে দিয়ে দেশে শান্তি…।”

২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তারপর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে পারেনি। কারণ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ভালোভাবে কাজটা করেছে, গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজরদারি এত ভালোভাবে করেছে, আর কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি। এরপরও স্যাংশনটা কীসের জন্য, সেটাইতো আমার প্রশ্ন।”

উন্নত দেশেও মূ্লস্ফীতি ও খাদ্য সংকট চলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেদিক থেকে আমরা আমাদের মানুষদেরকে প্রণোদনা দিয়েছি, এবার রোজার সময়তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নি…. রোজার সময়তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নি, গেছে?

তিনি বলেন, “আমাদের এত দুশ্চিন্তা কিসের? কথা নাই বার্তা নাই স্যাংশনের ভয় দেখাবে, আর আমরা ভয়ে বসে থাকব, কেন?

“আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, যারা আমাদের সপ্তম নৌবহরের ভয় দিয়েছিল, আমরা সেটাও পার করে বিজয় অর্জন এ কথা ভুললে চলবে না। আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে চলতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকলে… এক বেলা খেয়ে থাকব, তাতেও অসুবিধা নাই।”

বাংলাদেশের কিছু নাগরিকই দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বিদেশে যায় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “নিজের ভাঁড় ভালো নাই, ঘি ওয়ালার দোষ দিয়ে লাভ কী?”

তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হল, আমাদের দেশের কিছু মানুষই বাংলাদেশের বদনাম করে। তাদের স্বার্থ রক্ষা, অথচ তারা যে কত রকম দুর্নীতি, অপকর্ম, কতকিছুর সাথে জড়িত, সেগুলোতো আমাদের সাংবাদিকরা খুঁজে বের করে না। খুঁজলে দেখা যাবে অনেক কিছু পাওয়া যাবে। এরাই বাংলাদেশের বদনাম করে।”

এক্ষেত্রে শ্রম ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের কথা আলাদাভাবে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের কিছু শ্রমিক নেতা আছে, নিজেরা খাবেন দাবেন, আরাম-আয়েশে থাকবেন, দামি গাড়িতে চলবেন, পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করেন, দামি-দামি গাড়িতে চলেন।

“মামলা করেন, মামলা করে কয়টা মামলার রায় পাওয়া গেছে? প্রথমে মামলা, পরে আসে নেগোসিয়েশন। নেগোসিয়েশন মানেইতো আদান-প্রদান। এবং আয়েশে থেকে বাংলাদেশের বদনামটা করে আসে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের লোকরা গিয়েইতো বিভিন্ন জায়গায় বদনামটা করে আসে। এটাই দুর্ভাগ্যজনক। সাংবাদিকরা যদি এদিকটায় নজর দেন, অনেক কিছু পাবেন, অনেক তথ্য পাবেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ একটা উর্বর ভূমি। বাংলাদেশের মানুষ অনেক শক্তিশালী। তাছাড়া, অনেক দেশের মানুষ বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছে, আমাদের আয়ুষ্কাল বেড়েছে ঠিক…

“আমাদের নারী সমাজ, যুব সমাজ, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকে কাজ করে, আমরা নিজেদের কাজ করে নিজেরা খাব। আমাদের উপর যারা স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে কিচ্ছু কিনব না।”