দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণেই মূলত কোটিপতি আমানতের হিসাবের সংখ্যায় এমন পরিবর্তন এসেছে, বলছেন ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা।
Published : 11 Dec 2024, 01:04 AM
দেশে কোটি টাকার বেশি জমা রাখা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা কমেছে; সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৮৬১টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ব্যক্তি পর্যায়ের এসব ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ আগের জুন প্রান্তিকের চেয়ে কমেছে মোট ৮ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার ‘ব্যাংকিং স্ট্যাটিসটিকস’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যেখানে সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রেই একই প্রবণতার তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণেই মূলত কোটিপতি আমানতের হিসাবের এ সংখ্যায় এমন পরিবর্তন এসেছে।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের ব্যাংক খাতেও সংস্কার শুরু হয়। কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজবে ওই সময় আমানত তুলে নেন অনেক গ্রাহক। এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকগুলোয়।
এছাড়া আওয়ামী লীগ ও আগের সরকারের সুবিধাভোগীদের অনেকে প্রকাশ্যে আসছেন না। তাদের অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন। তাদের অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। কোটি টাকা আমানতের হিসাব থাকতে পারার কথা বলছেন ব্যাংকাররা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোটি টাকা আমানত থাকা ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা আগের প্রান্তিকের (জুন) চেয়ে ৬২০টি কমেছে। এ ধরনের হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।
জুন প্রান্তিকে এ ধরনের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪৮১টি। তখন আমানতের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, “কোটিপতিদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ কমে যাওয়ার পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে— রাজনৈতিক পালাবদল ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন।
“বিগত সরকারের সময় যারা সুবিধাভোগী ছিলেন, তাদের অনেকেই ৫ অগাস্টের পর টাকা তুলে নিয়েছেন। এছাড়া যাদের দখলে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ছিল, তারাও ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন।”
তিনি বলেন, “অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়লে এবং উচ্চমূল্যস্ফীতি দেখা দিলেও ব্যাংক আমানতের ওপর নেতিবিাচক প্রভাব পড়ে।”
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যাংক খাতে এক রকম অস্থিরতা কয়েক মাস ধরেই চলছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫ অগাস্টের পর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যক্তিদের তথ্য নেওয়া শুরু করে। এতে অনেক ব্যক্তি আমানত সরিয়ে ফেলেন। এটাও একটা কারণ।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সার্বিক ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৬৫৭টি। আমানতের পরিমাণ কমেছে ২৬ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি, যা জুন প্রান্তিকে ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি।
যদিও মার্চের তুলনায় জুন প্রান্তিকে হিসাব সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় ৩ হাজার।
জুন প্রান্তিক শেষে সব ধরনের ব্যাক হিসাব মিলিয়ে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা।