“যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে সব দেশে শ্রম পরিস্থিতি আরও উন্নত হোক। এটা শুধু বাংলাদেশকে টার্গেট করে না,” বলেন তিনি।
Published : 04 Dec 2023, 05:30 PM
শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির কারণে বাংলাদেশে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা নাকচ করেছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
শ্রম পরিস্থিতির ধারাবাহিক উন্নতির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কাজে তারা সন্তুষ্ট।”
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী, শ্রম সচিব, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে সব দেশে শ্রম পরিস্থিতি আরও উন্নত হোক। এটা শুধু বাংলাদেশকে টার্গেট করে না।”
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার সুরক্ষায় গত মাসে নতুন এক ঘোষণায় সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে, তাদের উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে।
ওই মেমোরেন্ডামের ঘোষণা দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শ্রমিক নির্যাতনের উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তারের নাম উল্লেখ করেন। এরপর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই নীতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে বলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সেলিম রেজা এক দাপ্তরিক চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করেছেন।
ওই চিঠি হাতে পাওয়ার পর এই বৈঠকে বসলেও একে ‘নিয়মিত বৈঠক’ আখ্যা দিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, তারা শ্রমিক অধিকার প্রশ্নে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য বসেছিলেন।
“তবে সেটা (যুক্তরাষ্ট্রের নীতি) আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। পাঁচজন অ্যাম্বাসেডর ও তিনজন সচিব মিলে যে ‘থ্রি প্লাস ফাইভ’ একটা আলোচনা হয় সেই আলোচনাটা চলতি মাসেই হওয়ার কথা আছে। সেই আলোচনার আগে আমরা ব্যবসায়ী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে আলাপ করে নিলাম।
“যুক্তরাষ্ট্রের মেমোরেন্ডামটা নিয়েও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি। স্টেকহোল্ডারদের বলেছি যে, সামনের দিকে আর কী কাজ করা যায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নিয়ে রপ্তানিকারকরা সচেতন
বাণিজ্য সচিব বলেন, “ইউএসএর প্রেসিডেন্সিয়াল ম্যামোরেন্ডাম বিষয়ে রপ্তানিকারকরা সচেতন আছেন। আমরাও অবশ্যই সচেতন আছি।
“আমাদের রপ্তানি বাজার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য যা যা করা দরকার আমরা সেটা করব। তবে অর্থনৈতিক সক্ষমতা, রপ্তানি পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর চাহিদা বিবেচনায় রেখেই সামনে আগাতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত ২০ সেপ্টেম্বর আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আমাদের অগ্রগতিগুলো সম্পর্কে জানে। তারা চায় যে আরও অগ্রগতি হোক। কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো উন্নত না।”
সংস্কার প্রক্রিয়ার উদাহরণ দিয়ে তপন কান্তি বলেন, “২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনবার শ্রম আইনে সংস্কার আনা হয়েছে। চারবার মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে মজুরি সংস্কার করা হয়েছে। নতুন নতুন শিল্পায়ন হচ্ছে, সেখানে কর্মপরিবেশ, শ্রম অধিকার এগুলো নিশ্চিতের ক্ষেত্রে একটা ভালো অবস্থানে আমরা আছি।”
সামনের দিকে সংস্কার করার মতো সমস্যা কোথায় রয়েছে প্রশ্ন করলে সচিব বলেন, “এখন ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে কারখানার ২০ ভাগ শ্রমিকের সমর্থন প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী এটাকে ১০ ভাগে নামিয়ে আনতে হবে। আমরা সেটাকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
“বেপজা আইন অনুযায়ী এখন ট্রেড ইউনিয়ন না বলে আমরা ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বলে থাকি। সেখানে তারা ট্রেড ইউনিয়ন প্রবর্তনের কথা বলে। জিনিসটা প্রায় একই।“
২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বেপজা আইনটা সংশোধন হবে জানিয়ে তপন কান্তি বলেন, “সংশোধন করে কী করা হবে সেটা আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে চাচ্ছি।”
এই স্টেক হোল্ডার বলতে তিনি বুঝিয়েছেন বিনিয়োগকারী, মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও সরকার।
সচিব বলেন, “আগে বেপজার কারখানাগুলোতে সরকারি পরিদর্শকরা পরিদর্শন করতে পারত না। এখন বিদেশিদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা সেটা চালু করেছি। ইতোমধ্যেই ৬৩টি কারখানায় পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে।”
উদ্বেগ নেই বিজিএমইএরও
বৈঠকে উপস্থিত তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও উৎপাদকদের সমিতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই। কারণ, আমরা মনে করি, আমাদের যে সংস্কারমূলক কাজগুলো চলছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিবিরুদ্ধ কিছু নেই। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লানের কাজ চলছে। সেই কাজগুলো যেন চলমান থাকে সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি।”
একই ধরনের বক্তব্য রাখেন পোশাক ব্যবসায়ীদের আরেক সমিতি বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও। তিনি বলেন, “শ্রম অধিকার নিয়ে আমরা যথেষ্টা সচেতন আছি। শ্রম পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে এমনটি আমি মনে করি না।”