ইউরোপ শুধু মূলধন নয়, সুশাসন ও টেকসই প্রবৃদ্ধির মডেলও নিয়ে আসবে বাংলাদেশে, আনুষ্ঠানিক যাত্রায় বলেন সংগঠনের চেয়ারপারসন।
Published : 03 Dec 2024, 11:54 PM
বাংলাদেশে আরও বেশি ইউরোপীয় বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি সুশাসন ও টেকসই প্রবৃদ্ধির মডেল তৈরিতে ভূমিকা রাখার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (ইউরোচেম)।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল র্যাডিসনে ব্যবসায়ীসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে ব্যবসায়িক এ সংগঠন।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ইউরোচেমের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ বলেন, বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোচেম এখানে আরও ইউরোপীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। ইউরোপ শুধু মূলধন নয়, সুশাসন ও টেকসই প্রবৃদ্ধির মডেলও নিয়ে আসবে এখানে।
এ চেম্বারের প্রতিষ্ঠাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘নতুন মাইলফলক’ হিসেবে তুলে ধরেন করেন তিনি।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেসটরস চেম্বার অব কমার্স আন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) এবং আমেরিকান ব্যবসায়ীদের সংগঠন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) পর এবার যাত্রা শুরু হল ইউরোচেমের।
বিশ্বের ৫৪টি দেশের বাজারে ইউপোরীয় কোম্পানিগুলোকে প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপিয়ান বিজনেস অর্গানাইজেশনের (ইবিও) অংশ হিসেবে গঠিত হচ্ছে ইউরোচেম। ইউরোপীয় বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় কোম্পানিকে নিয়ে কাজ করে এ সংগঠন।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনাকে সঠিক পথে নিয়ে আসার কাজ কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার চায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ সবপক্ষ যেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলার সঠিক পূর্বাভাসটা দেয়।
“বাংলাদেশের সত্যিকারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক, চ্যালেঞ্জ ও অর্জনের পূর্বাভাস আমরা দেখতে চাই; পথচলা অতীতে কেমন ছিল, এখন কেমন এবং ভবিষ্যতে কেমন হবে।”
বহুজাতিক কোম্পানির বড় পদের চাকরি আর শিক্ষকতা পেরিয়ে সরকারি দায়িত্বে আসা লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “আমি আপনাদেরকে আহ্বান জানাই, আমাদের দূত হোন। সহযোগিতা করুন বাংলাদেশ ন্যারেটিভটা যেন সোজাসুজি হয়।”
ইউরোচেমের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইউরোপীয় বিনিয়োগকারী এবং তাদের এ দেশীয় পক্ষগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে এ চেম্বার।
এটি বেসরকারি খাতের পাশাপাশি বিডা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মত সরকারি অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে সহযোগিতা করবে, যাতে বাংলাদেশে ব্যবসা করার পরিবেশের উন্নয়ন করা যায়।
পাশাপাশি ইউরোচেম ইউরোপীয় ও বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসন্ন যে কোনো বিধিনিষেধের বিষয়ে উপদেশ দেবে। এর মধ্যে ‘করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডিরেক্টিভ’, টেক্সটাইল স্ট্র্যাটেজি, সার্কুলার ইকোনমি, ডিজিটাল প্রডাক্ট পাসপোর্ট এবং ’ইকোডিজাইন ফর সাসটেইনেবল প্রডাক্টসের’ মত নীতি বিধি রয়েছে।
বাংলাদেশের সবুজ ও ডিজিটাল রূপান্তরকে সহযোগিতার জন্য অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করতে চায় সংগঠনটি।
বক্তৃতায় ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মুলার বলেন, পাঁচটি উদ্দেশ্যসাধনের জন্য ইউরোচেমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চান তিনি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেওয়া, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের নিবিড় সংযোগ তৈরির উপায় বের করতে চান তিনি।
পাশাপাশি এলডিসি থেকে উত্তরণের ও সরবরাহ ব্যবস্থায় নীতির টেকসই বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং বৃহত্তর পরিসরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরাসরি বিনিয়োগের বিষয়টিও রয়েছে তার অগ্রাধিকারে।
এছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির আরও বহুমুখী করার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করার কাজও করতে চান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, ইউরোচেমের ভাইস চেয়ারম্যান-এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশের প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইকবাল চৌধুরী বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তা দেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি, ঢাকায় কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।