Published : 01 Jan 2023, 08:02 PM
পাহাড় ঘেরা শহর রাঙামাটির জেলা প্রশাসকের বাংলোর প্রবেশ পথের পাশেই রয়েছে সুবিশাল একটি চাপালিশ গাছ। গাছের গায়ে লাগানো বোর্ড অনুসারে এই চাপালিশ গাছের বর্তমান বয়স ৩১৮ বছর, দৈর্ঘ্য ১০৩ ফুট এবং পরিধি ২৫ ফুট।
সত্যিই কি গাছটির বয়স তিনশ পেরিয়ে গেছে?
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমার কাছে আসলে তেমন কোনো তথ্য নেই, জানতে হবে।
”তবে বোটানিস্ট বা হর্টিকাল্চারিস্টরাই ভালো বলতে পারবে। কারণ বয়স বের করার একটা সায়েন্টিফিক প্রক্রিয়া আছে।”
গাছের বয়স গণনার পদ্ধতি নিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) অজিত কুমার রুদ্র বলেন, “গাছের বয়স গণনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা হলো, ঋতুচক্র হিসেবে গাছ সব ঋতুতে বাড়ে না।
”সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতুতে গাছের বৃদ্ধি ঘটে বেশি। শীতকালে গাছ বাড়ে না। গাছ না বাড়ার কারণে প্রতি বছর সে সময় গাছের চারপাশে একটা রিংয়ের মত তৈরি হয়। যন্ত্রের সাহায্যে সেই রিংগুলো গণনা করে গাছের বয়স বার করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বৈজ্ঞানিক গণনা ছাড়াও স্থানীয়ভাবেও গাছের বয়স গণনা করা হয়। গাছ লাগানো থেকে হিসেব করে বছর গুণে অথবা জনশ্রুতি থেকেও অনুমান ভিত্তিক গাছের বয়স গণনা করা হয়।”
এই চাপালিশ গাছের বয়স আদৌ ৩১৮ বছর কি না তা নিয়ে অজিত কুমার রুদ্র বলেন, “এখানে বয়সের বিষয়টি অনেক বছর ধরে চলে এসেছে। চলমান একটা জনশ্রুতির বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকে না।
”যে সময় থেকে গাছটির বয়সের বিষয়টি প্রকাশিত, সেসময় নিশ্চয় ওই দুই পদ্ধতির কোনো একটি দ্বারা চাপালিশ গাছের বয়স নির্ণীত হয়েছিল এর আকার, আয়তন, পরিধিসহ। এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ভূমিধস এসবের কারণে।”
এই ধরনের গাছকে সাধারণত সেঞ্চুরিয়ান ট্রি বলা হয়, জানালেন তিনি।
গাছ বয়স নির্ণয়ের প্রসঙ্গটি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করলেন চট্টগ্রাম কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সমীর কান্তি নাথ।
তিনি বলেন, "প্রথম কথা হচ্ছে গাছের বয়স শতভাগ সুনির্দিষ্ট করা যায় না, যদি গাছ জীবিত থাকে। একাধিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে, যেগুলো ব্যবহার করে আনুমানিক বয়স নির্ধারণ করা যায়।
”তবে গাছ কেটে ফেলার পর গাছের গায়ের বর্ষবলয়ের সংখ্যা, এর সাথে পরিধির মাপের একটা হিসাবনিকাশ করে বয়স নির্ধারণের যে পদ্ধতি সেটাকে আমরা মোটামুটি নির্ভরযোগ্য বলি।”
সমীর কান্তি নাথ বলেন, "জীবিত গাছে এই বর্ষবলয়ের সংখ্যা দেখা যায় না, এজন্য আমরা একটা মোটামুটি মাপ ধরে নিই, যেটা নির্ভরযোগ্য নয় কারণ মাটির গুণাগুণের তারতম্যের কারণে গ্রোথ রেট অফ ট্রি ভিন্ন হতে পারে।
”তারপরও যদি গড়পড়তা হিসাব করি, গাছের গায়ে লাগানো তথ্য যদি ঠিক থাকে, অন্তত পরিধি যদি ২৫ ফুট ঠিক থাকে এবং এই মাপটা যদি মাটি থেকে সাড়ে চার ফুট উপর থেকে নেওয়া হয় তাহলে এই গাছের বয়স আনুমানিক ২৩০ থেকে ২৫০ বছর হবে।”
চাপালিশ গাছটির ডালপালা অনেক ছড়ানো গাছের গোড়ার মাটি যেন সরে না যায় তাই পাকা দেওয়ালের বেষ্টনী দেওয়া হলেও শেকড় বেশ বিস্তৃত। পরগাছা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মাটি ক্ষয়, জনসাধারণের অসচেতনতায় গাছটি সময়ে সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কালের স্বাক্ষী হয়ে প্রাঞ্জলভাবে ছায়া বিলিয়ে বেড়ায় এখনো।
স্থানীয় পরিবেশ সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের প্রধান নির্বাহী ও সাংবাদিক ফজলে এলাহী মনে করেন, চাপালিশ গাছটি এই শহরের ইতিহাসেরই অংশ।
”একে সংরক্ষণ করতে হবে শহরের প্রয়োজনেই। কোনো কারণেই যেন গাছটি ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে” বললেন তিনি।
ডিসি বাংলো পার্ক সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসা স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ”আমার বয়স এখন ৫২।
”অনেক বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস, বাপ-দাদার মুখেও শুনেছি এই গাছের কথা, অনেক বছরের পুরানো এটি।”
নিকটবর্তী ঐতিহ্যবাহী স্কুল রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, সাংবাদিক ও সংগঠক সৈকত রঞ্জন চৌধুরীর স্মৃতিতেও রয়েছে এই চাপালিশ গাছ।
তিনি বলেন, “আমরা স্কুলে প্রাতঃবিভাগে ছিলাম। স্কুল ছুটির পর অনেক সময় কেটেছে এই এলাকায়।
”... প্রেমের কোনো স্মৃতি না থাকলেও, এই চাপালিশ গাছের নিচে কত আড্ডা ছিল আমাদের বন্ধুদের।”
আপনার নিবন্ধিত ইমেইল থেকে অপ্রকাশিত লেখা/ছবি/ভিডিও আকারে নাগরিক সংবাদ পাঠান [email protected] ঠিকানায়।
নিবন্ধিত নাগরিক সাংবাদিক হতে আপনার নাম (বাংলায়), ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি এবং ছবি [email protected] ঠিকানায় ইমেইল করুন।