ভুতু কোনো মানুষের নাম নয়। এক অবলা প্রাণী। একটি বিড়াল।। ভুতূ আমার রাখা নাম নয়। এটা আমার আন্টির দেওয়া নাম।
ভুতুকে আমি বেশিদিন লালন-পালন করিনি। আমি কোনো বিড়ালকে কাছে ডাকি না। কারণ বিড়াল কামড় দেয়; আঁচড়ে দেয়। সেই ভয় রয়েছে মনে। কিন্তু যেদিন আমাদের ঘরে ভুতূ আসলো, আমি হাতের ঈশারা দিতেই আমার কাছে চলে এলো।
হয়তো খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো সেদিন। তাকে আমি খাবার দেই। আমি মনে করলাম সাহস করে কোলে নেই। আদর পেয়ে আমার কোলেই শুয়ে পরলো ভুতু। সেদিন থেকেই আমি এই অবলা প্রাণীর প্রেমে পড়ে যাই।
প্রতিদিন রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘরে ফিরলেই দরজা সামনে উঁকি দিত ভুতু। ভুতু দুই বারে দুটি বাচ্চাও দিয়েছে বাড়িতে। ভুতু আর তার বাচ্চাদের খুনসুটি আমার ভালোলাগাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের প্রতি আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল এরপর থেকেই।
ভুতুর একটি বাচ্চা হয়েছে দুই মাস হলো। ভুতুর দুধ এখনো খায় ওই বাচ্চা বিড়াল। আমি ওর নাম দিয়েছি পুস্পা। পুস্পা মায়ের সাথে সারাদিন খুনসুটি করে। মায়ের টান এখনো ছাড়তে পারেনি।
কিন্তু কয়েকদিন হল ভুতুকে খুঁজে পাচ্ছি না। পুস্পা ভুতুর জন্য পাগল হয়ে গেছে যেন; মাকে অনেকদিন দেখে না। আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। তবু ভুতুকে পাইনা।
তারপর অবশ্য ভুতুকে পাওয়া গেল মুমূর্ষ অবস্থায় ছাদের উপর। দিন কয়েক কিছু কোনোকিছু না খেয়ে শরীর খারাপ করেছে।
সব কাজ ফেলে রেখে তাড়াতাড়ি ভুতুকে নিয়ে সিলেট শহরে দুই ঘণ্টা ঘুরলাম মোটরবাইকে। কিন্তু একটা পশু হাসপাতাল বা ক্লিনিক পেলাম না। ওদিকে যত সময় যাচ্ছে ভুতুর অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।
শেষ সময়ে এক ডাক্তার পেলাম। যিনি দেখা মাত্র বলে দিলেন ভুতুর সময় শেষ। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আর কিছুই নেই। ভুতুকে আমি তখন কোলে নিয়েই চেয়ারে বসে আছি। ভুতু আমার দিকে তাকাচ্ছে হয়তো বুঝতে পারছে তার সময় শেষ। কিন্তু আমাকে মুখে বলতে পারছে না। হয়তো ভুতু আমাকে তার বাচ্চার দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় ভুতু আমার কোলে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। তার না বলা চোখের চাওয়া আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। ভুতু কি জানে সে কি অসীম ভালোবাসার একটি প্রাণী ছিল আমার কাছে!