ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মাঠের কাজ দেখতে পটুয়াখালিতে গিয়েছিলাম। ওই সময় ধারনাতেই ছিল না যে কি অপার বিস্ময় অপেক্ষা করছে সেখানে। কলাপাড়ায় পরিচয় হয় হামিদা আক্তারের সাথে। সদ্য বাইশে পা দেওয়া হামিদা বিয়ের পর যখন এই গ্রামে আসেন তখন নিজের ঘরের বাইরের উঠানটুকুই ছিল তার বিচরণের জায়গা।
এক সময় একটি সাহসী সিদ্ধান্ত তাকে ওই বলয় থেকে বার করে নিয়ে আসে সহসাই।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ বা সিআইপিআরবি ২০১৭ সাল থেকে এই এলাকায় 'ভাসা' প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার যে নীরব মহামারী ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশে, তা রুখে দেওয়ার জন্য এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী আর বরগুনার তিনটি উপজেলায়।
এরই একটি পটুয়াখালির কলাপাড়া; আর সেখানে আরো অনেক সাঁতার প্রশিক্ষকের একজন হলেন হামিদা আক্তার। গত এক বছরে তার এলাকার ৮৫ জন শিশুকে সাঁতার শিখিয়েছেন তিনি।
সাঁতার শেখানোর জন্য তার বাড়ির কাছেই একটি পুকুরকে বেছে নেওয়া হয়। এই কাজে সহযোগিতা করেন সিআইপিআরবির ভাসা প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
পুকুরে বাঁশ দিয়ে সাঁতার শেখানোর বৈজ্ঞানিক অবকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয় প্রকল্পের আওতায়। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় হামিদা আক্তারকে। প্রশিক্ষক হিসাবে নিয়োগের পর থেকে এক এক দলে এক সাথে ১৫-২০ জন শিশুকে সাঁতার শেখান তিনি; যাদের বয়স ৬ থেকে ১০ বছর।
১৪ দিন ধরে সাঁতারের ২১টি কৌশল শেখানোর পর নেওয়া হয় পরীক্ষা। পরীক্ষায় সফল হলে শিশুদের দেওয়া হয় সার্টিফিকেট। যারা সার্টিফিকেট পায় তাদের বলা হয় 'সুইম সেইফ গ্রাজুয়েট'।
হামিদা আক্তার, এক বছরে ৮৫ জন শিশুকে সাঁতার শিখিয়েছেন, যাদের বয়স ৬-১০ বছর।
নিজে কীভাবে আর কবে সাঁতার শিখেছেন তা মনে করতে পারেন না হামিদা আক্তার। সাঁতার শিখতে যে কোনো নিয়ম জানার দরকার আছে, তাও তিনি জানতেন না। সাঁতার শেখা যে জীবিকার উপায় হতে পারে, ছিল না সে ধারণাও।
হামিদা বলেন, "এই প্রশিক্ষণ একটি শিশুকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।"
সিআইপিআরবির ভাসা প্রকল্পের অধীনে গবেষণা থেকে তাদের দাবি, সাঁতার শেখা শিশুর পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৯৬ শতাংশ কমে যায়।
এই প্রকল্পের সাঁতার প্রশিক্ষকদের ৮৫ শতাংশই নারী।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা বললেন, মেয়ে শিশুরাও এই প্রকল্পের আওতায় সাঁতার শেখে। নারী প্রশিক্ষক হলে বাবা-মায়েরা সানন্দে তাদের মেয়েকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান।
সাঁতার শেখানোর মত একটি পেশা বেছে নেওয়া হামিদার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। পিছিয়ে না গিয়ে চ্যালেঞ্জটাকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিম 'চুজ টু চ্যালেঞ্জ' যেন হামিদা আক্তারের বেছে নেওয়া পথেরই প্রতিচ্ছবি।