অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ: মেনস্ট্রুয়াল কাপ কিনতে হলে যা জানতে হবে

নাহিদ দিপা
Published : 2 Jan 2021, 07:16 PM
Updated : 2 Jan 2021, 07:16 PM

সোশাল মিডিয়াতে বিভিন্ন মেয়েদের গ্রুপে আজকাল দেখা যায় মেনস্ট্রুয়াল কাপ নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট। আমি নিজেও ব্যবহার করছি প্রায় তিন বছর ধরে। আর অনুভব করি কেন আগেই এর সন্ধান পেলাম না। আমার মত অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন কিনতে। যা খুবই আশা জাগানিয়া। কিন্তু এই সুযোগ নিতেই অনেক সস্তা, অনিরাপদ আর অনুমোদনবিহীন মেনস্ট্রুয়াল কাপে সয়লাব হয়ে গেছে অনলাইন মার্কেট।

এখন পর্যন্ত মেনস্ট্রুয়াল কাপ বিক্রয় করে এমন কিছু ফেইসবুক পেইজ ও ক্রেতার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি,  বাংলাদেশে অনলাইনে ও ফেইসবুকে যেসব কাপ বিক্রির বিজ্ঞাপন হরহামেশা দেওয়া হয়, সেগুলোর বেশিরভাগই রেপ্লিকা। এইসব পণ্যের বেশিরভাগেরই এফডিএ বা ইসি বা কোনো দেশের ড্রাগ অ্যাপ্রুভাল লিস্টে নাম নেই। আর যেগুলোর নাম পাওয়া যায়, সেগুলোর লোগো ও প্যাকেজিং এর সঙ্গে মিল পাওয়া যায় না। দামেও বিশাল পার্থক্য চোখে পড়েছে।

নতুন একটি পণ্য বিধায় অনেকেই বুঝতে পারেন না কোনটা আসল আর কোনটা নকল। যারা মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করছেন বা করতে আগ্রহী তাদের জন্যই আমার এই লেখা।

এই ধরনের কাপ যেহেতু মাসিকের সময় মেয়েদের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করাতে হয়, যা একদিনে প্রবাহ বুঝে  ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়,  তা শতভাগ নিরাপদ হওয়া জরুরি। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে বোঝা যাবে, যে মেনস্ট্রুয়াল কাপটি কেউ কিনতে চাইছেন তা নিরাপদ, অনুমোদিত আর বিশ্বাসযোগ্য কি না?

চীনের কোনো কোনো কোম্পানিকে কমপক্ষে ১০০ মেনস্ট্রুয়াল কাপের অর্ডার করলে তারা পছন্দের প্যাকেজিং অনুযায়ী বানিয়ে দিতে পারে। এতে কাপ প্রতি দাম হবে শূন্য দশমিক পাঁচ ইউএস ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩ ডলার; আর এসব বাংলাদেশে অনলাইনে বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার পরামর্শ হচ্ছে, প্রথমে গুগলে সার্চ দিয়ে ওই ব্র্যান্ডের কাপটির ওয়েবসাইট লিংক খুঁজে দেখতে হবে। বিশ্বের ভালো যে কোনো ব্র্যান্ডের মেনস্ট্রুয়াল কাপের নিজস্ব ওয়েব সাইট আছে।

আসলে মেনস্ট্রুয়াল কাপ কেনার আগে নিজের অবশ্যই একটু পড়াশোনা করে দেখতে হবে। এখন  হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট ; ফলে জানার সুযোগ আছে সহজেই। যে কাপটা কিনতে যাচ্ছেন, তার নাম লিখে গুগলে একটু সার্চ দিলে জানা যাবে এর বিভিন্ন দিক নিয়ে।

বাংলাদেশে অনেক ফেইসবুক পেইজে সব মেনস্ট্রুয়াল কাপ বিক্রেতাই তাদের পণ্যটি এফডিএ অনুমোদিত বলে বলে বিক্রি করে। তাই কাপটি এফডিএ এবং ইসি অনুমোদিত কি না তা যাচাই করে দেখতে হবে। বাংলাদেশে যেমন বিএসটিআই, যুক্তরাষ্ট্রে তেমন এফডিএ এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে রয়েছে ইসি। এফডিএর ওয়েবসাইটে এ ধরনের রেজিস্টার্ড ব্র্যান্ডের তালিকা রয়েছে।

অ্যামাজন বা ইবে বা ওয়ালমার্ট ই-কমার্স সাইটগুলোতে কাপের দাম লেখা থাকে।  ওইসব পণ্যের নাম, প্যাকেজিং, বর্ণনা বাংলাদেশে পাওয়া কাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে মান সম্মত পণ্য কি না তা যাচাই করা সহজ হবে।

বাংলাদেশে কোনো এফ-কমার্স থেকে  এ ধরনের পণ্য কেনার আগে  ও পরে তাদের বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার সুযোগ রয়েছে কি না সেটাও পরখ করে দেখতে হবে।

মেনস্ট্রুয়াল কাপ আসলেই মেয়েদের পিরিয়ড সামাল দেওয়ার জন্য একটি যুগান্তকারী আবিস্কার। যারা সঠিক কাপ নির্বাচন করে একবার পরে অভ্যস্ত হয়েছেন, তারা জানেন এটা কত বড় আশীর্বাদ। তবে অবশ্যই যাচাই করে নিজের জন্য নিরাপদ কাপটি খুঁজে নিতে হবে। নকল, রেপ্লিকা আর অনুমোদনহীন মেনস্ট্রুয়াল কাপ কেনা ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে নিজের শরীরের সুস্থতার স্বার্থেই।