মাসিকের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন স্যানিটারি প্রডাক্ট নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষার ফলাফল একীভূত করে বড় পরিসরে পর্যালোচনার পর গবেষকরা এমন মত প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ধনী-গরিব মিলিয়ে বিভিন্ন দেশের ৩ হাজার ৩১৯ জন নারী ও কিশোরীর মতামত নিয়ে ৪৩টি গবেষণার ফল পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নাল ল্যানসেট পাবলিক হেলথ একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পুনের মত রক্ত শুষে না নিয়ে মেনস্ট্রুয়াল কাপ তা জমিয়ে রাখে। একটি কাপ পরিষ্কার করে বার বার ব্যবহার করা যায়। তাতে খরচ পড়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের চেয়ে অনেক কম।
ইদানিং এ কাপের জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়লেও নারীদের মধ্যে এর ব্যবহার নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে তথ্য এসেছে পর্যালোচনা প্রতিবেদনে।
সেখানে বলা হয়েছে, মেস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার নিয়ে সাধারণ কিছু ভীতি কাজ করে নারীদের মধ্যে। এই কাপ যোনির ভেতরে প্রবেশ করাতে হয় বলে অল্পবয়সী ও অবিবাহিত মেয়েরা তা ব্যবহার করতে চায় না।
আবার কাপ প্রবেশ করানো ও বের করার সময় প্রদাহ, মাসিকের রক্তের দাগ কাপড়ে লেগে যাওয়া নিয়েও অস্বস্তিতে ভোগেন অনেকে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এ কাপ ব্যবহারে এসব সমস্যায় পড়ার ঘটনা বিরল।
ল্যানসেটের নিবন্ধ বলছে, মেস্ট্রুয়াল কাপের স্বাস্থ্যগত সমস্যাও তেমন নেই। বরং এ কাপ সুরক্ষিত, যে কোনো বয়সের মেয়েরাই এটা ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন আকারের কাপও পাওয়া যায়।
১৩টি গবেষণার ফলে দেখা গেছে, এ কাপ একবার ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর ৭০ শতাংশ নারীই এটি নিয়মিত ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন।
প্রায় তিনশ নারীর ওপর চালানো চারটি গবেষণায় প্যাড অথবা টেম্পুনের সঙ্গে মেন্স্ট্রুয়াল কাপের ধারণ ক্ষমতা ও চুইয়ে পড়ার প্রবণতা মিলিয়ে দেখেছেন গবেষকরা।
তিনটি গবেষণায় দেখা গেছে, টেম্পুন ও প্যাড থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ার সম্ভাবনা যতটুকু থাকে, মেন্স্ট্রুয়াল কাপের ক্ষেত্রেও তা একই রকম। বরং একটি গবেষণায় কাপের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা আরও কম পাওয়া গেছে। ফলে কাপড়ে দাগ লাগার ভয়ও থাকে কম।
ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা মার্টিনা ফ্রাটেরনেইল (৩১) পিরিয়ডের সময় এ কাপ ব্যবহার করেন গত ১০ বছর ধরে।
তিনি বলেন, “হাতের কাছে বেসিন আর পরিষ্কার পানি না থাকলে এ কাপ ব্যবহার করা কিছুটা ঝামেলার বলে মনে হতে পারে। তবে খরচ আর পরিবেশের সুরক্ষার বিষয় আমলে নিলে সেসব ঝামেলা কিছুই না।”
মার্টিনা বলেন, “মেনস্ট্রুয়াল কাপ এমন স্বাভাবিকভাবে শরীরের সঙ্গে মিলে যায় যে বাড়তি কিছু আছে বলে মনেই হয় না। আমি সবাইকে এটা ব্যবহার করতে বলব। বিশেষ করে এই সময় যখন আমরা পরিবেশ নিয়ে সচেতন হচ্ছি, তখন এ কাপ অবশ্যই করের আওতামুক্ত রাখা উচিত।”
যেভাবে কাজ করে
* মেনস্ট্রুয়াল কাপ তৈরি হয় রাবার বা সিলিকনের মত নরম ও সম্প্রসারণক্ষম উপাদান দিয়ে। ইংরেজি সি আকৃতির মতো করে ভাঁজ দিয়ে এটি যোনীতে প্রবেশ করাতে হয়।
*এরপর কাপটি নিজে থেকেই ভাঁজ খুলে ভেতরে এঁটে যায় এবং এক ধরনের সাকশন সিল তৈরি করে যার ফলে ঋতুকালীন রক্ত বেরিয়ে না এসে ভেতরেই জমা হয়।
*ছয় থেকে আট ঘণ্টা পরপর সেই কাপ বের করে পরিষ্কার করতে হয়। ধুরে ধুয়ে ব্যবহার করা যায় বহু বছর।
এ গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের অধ্যাপক পেনেলোপ ফিলিপস-হাওয়ার্ড বলেন, বিশ্বে ঋতুমতি বয়সের নারীর সংখ্যা ১৯০ কোটি। বছরে ৬৫ দিন তাদের এ স্রাব হয়। অথচ মাসিকের সময় ব্যবহারযোগ্য পরিচ্ছনতার সামগ্রী নিয়ে ভাল মানের গবেষণা খুব কমই হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ১২ থেকে ৫২ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে যাদের সন্তান নেই, তাদের প্রায় ৪৮০টি পিরিয়ড পার হতে হয়।
যুক্তরাজ্যে একটি মিনস্ট্রুয়াল কাপের জন্য খরচ হয় ১৫ থেকে ২৫ পাউন্ড খরচ হয়, যা একবাক্স টেম্পুনের দামের চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি। কিন্তু এই কাপ বহু বছর নিরাপদে ব্যবহার করা যায় বলে দীর্ঘমেয়াদে খরচ হয় অনেক কম।
আর একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয় না বলে টেম্পুন ও স্যানিটারি প্যাডের চেয়ে মিনস্ট্রুয়াল কাপকে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব বলা হচ্ছে।
গবেষকদের বিশ্বাস, মেনস্ট্রুয়াল কাপের ব্যবহার বাড়িয়ে সারা বিশ্বেই নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ও বাড়তি খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব।