প্রকৃতি বুঝি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল এই মানব জাতির ওপর। হবে নাই বা কেন? কম অত্যাচার তো আমরা করিনি এর ওপর! যত্রতত্র গাছ কেটে নিচ্ছি, বড় বড় ইমারত বানাচ্ছি, কারখানার-গাড়ির কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে দিচ্ছি বাতাসে। শুধু কি তাই? বনের একটি প্রাণীও বাদ যায়নি মানুষের খাবার তালিকায়। গরু-ছাগল খেয়েও যেন তৃপ্তি হচ্ছিল না মানুষের; এমন কি সমুদ্রের তিমির তেলেও লোলুপ চোখ পড়ে গেল।
অস্ট্রেলিয়ার বনে আগুন জ্বলে উঠলো; সে কি দাবানল! নিজেদের বিনোদন আর সুবিধা ভোগের জন্য যখন ইচ্ছে প্রকৃতির বুকে কুড়োল চালাই আমরা। পাহাড়ে বেড়াতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলখানাও ছুঁড়ে ফেলে আসি।
চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরের শেষে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। দুই-আড়াই মাস লড়াই করে চীন এখন সঙ্কট কাটিয়ে উঠলেও সারা বিশ্বে তা ভয়ংকর ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখন তৈরি হয়নি, তবে চেষ্টা চলছে দেশে দেশে।
ইদানীং ফেইসবুক স্ক্রল করলে একটি ছবি ঘুরতে দেখি; ঘরবন্দি মানুষ জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে, আর গৃহপালিত ও বন্য প্রাণিরা সেই বন্দি মানুষ দেখতে ভিড় করছে।
প্রকৃতি তার কঠিন প্রতিশোধটা অবশেষে নিয়েই নিল । আজ পুরো বিশ্বের মানুষ ঘরবন্দি। কী ভীষণ ক্ষেপে ছিল প্রকৃতি তা আজ সমুদ্রে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। সেখানে তিমি আর হাঙরের অবাধ বিচরণ।
https://www.youtube.com/watch?v=28a3uAxDsDo
আকাশে কালো ধোঁয়া নেই। চারপাশে নির্জনতা খেলা করছে। যানবাহনের বাড়তি চাপ নেই। পাখিরা নিশ্চিন্তে উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে। এটাই তো চেয়েছিল প্রকৃতি। তাই বুঝি সে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে এতোটুকু কুন্ঠা বোধ করেনি। প্রকৃতি ধীরে ধীরে সে ফিরে পাচ্ছে তার প্রাচীন চেহারা।
এই যখন অবস্থা, তখন আর বুঝতে বাকি নেই আমরা প্রকৃতির সামনে কতই না ক্ষুদ্র। তবুও বিজ্ঞানীরা প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করে যাচ্ছেন কোভিড-১৯ ঠেকাতে। তাদের চেষ্টা অটুট থাকুক, পাশাপাশি আমরাও একটু সচেতন হই। পরিবেশের ওপর, প্রাণির ওপর, গাছের ওপর অবাধ নির্যাতন বন্ধ করি।