কোয়ারেন্টিনের দিনে দ্বিতীয় দফায় দেখা ‘দ্বিতীয় পুরুষ’

তন্ময় সাগর
Published : 18 April 2020, 08:24 PM
Updated : 18 April 2020, 08:24 PM

ঘরে বসে থাকার দিনে 'দ্বিতীয় পুরুষ' দেখে নিলাম দ্বিতীয় বার। প্রথমবার দেখে মনে হয়েছিল সিনেমাটির গতি বেশি। খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল। লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিল। দ্বিতীয় বার দেখে সেটা আর মনে হল না।

বড় ধাক্কাটা নিঃসন্দেহে নায়কের মানে অভিজিৎ পাকড়াশীর মানে পরমের 'খোকা' পরিচয়টা আমাদের মানে দর্শকের সামনে উন্মোচিত হওয়াটা। নায়কের শুদ্ধতা-বিশুদ্ধতা বা নায়কোচিত অতীত না থাকাটা বাংলা সিনেমার দর্শকেরা কীভাবে নেবেন, কীভাবে মুল্যায়ন করবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। নায়কের চরিত্রের কৌলীণ্য আর রাখলেন না পরিচালক সৃজিত । এককালের দাগী খুনি সমকামীও নায়ক হতে পারেন!

দ্বিতীয় পুরুষের শেষ দেখে মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঢাবির এক ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনার কথা। ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত ও ধৃত মজনুকে অনেকেই ধর্ষক হিসেবে মানতে পারছিলেন না৷ মজনুর শারীরিক শক্তি সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছিলো তখন৷

দ্বিতীয় পুরুষের নায়ক খোকার  অশুদ্ধ অতীত দেখে বাঙালি দর্শক থ মেরে যাবেন নিশ্চিত ভাবে। হজম করা মুশকিল। যেমন মুশকিল ছিল মজনুর ধর্ষক হওয়াটা মানতে পারাটা। বাংলা সিনেমার নায়কের চরিত্রের কৌলিন্য নষ্ট হওয়ায় বাঙালি শোকাতুর হতেই পারে।

'২২শে শ্রাবণ' সিনেমার সিক্যুয়াল হয়ে থাকলে  'দ্বিতীয় পুরুষ' সে মাত্রার আঁতেল সিনেমা হয়ে উঠতে পারেনি। শেষে চমক থাকলেও তাতে পুরো সিনেমা প্রতিষ্ঠা পায় না। পুরো সিনেমায় পুলিশের আচরণ বা ভূমিকা যাচ্ছেতাই। পরপর হওয়া খুন তিনটি কত সময়ের ব্যবধানে হয়েছে সেটার ধারণা না দিলেও কলকাতার বুকে ২০১৯ সালে এসে একই খুনি পরপর তিন তিনটে খুন করার সুযোগ পেয়ে যাবে এটা বাস্তবসম্মত মনে হয়নি৷ খুনিকে ধরার পদ্ধতি ও ব্যাপারটিও সিনেমার স্পিরিটের সাথে যায় না৷ একেবারেই সাদামাটা ঠেকেছে। প্রথম বা দ্বিতীয় খুনের পর খুনির চেহারার স্কেচ করা সম্ভব হয়নি এটাও ঠিক নেওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশের ডিআইজি পুনর্বাসনের মহান ব্রত নিয়ে খোকার মত ১৫ -১৬ বছরের অপরাধীকেই পেলেন। এক দাগীর পুলিশ রেকর্ড গায়েব করে হলেও তাকেই পুনর্বাসন করতে হবে?

চিকেন চাউমিন আর চিলি ফিশ খাওয়া খোকার জেনেশুনে জ্ঞাতসারেই অভিজিৎ পাকড়াশী হয়ে উঠাটা কি পোয়েটিক জাস্টিস?  পল্টনকে খুনের পর তাই চিকেন চাউমিন আর চিলি ফিশ খেয়েই নিজেকে পাল্টাবার বা বলা ভাল সমাজকে ধোঁকা দেবার কবিতাটা শেষ করেছে খোকা।

সিনেমার গান ভাল হয়েছে।  তবে  পরিচালকের যাবতীয় মনযোগ শেষের দৃশ্যে ছিল। কিন্তু শেষের দৃশ্য পর্যন্ত সিনেমার যাত্রাটি যথোপযুক্ত ছিল না সব সময়। আর তাই এটা বলতেই হচ্ছে, দ্বিতীয় পুরুষ সৃজিতের সিগনেচার হয়ে ওঠেনি।