উত্তরবঙ্গের পথে পথে

তন্ময় সাগর
Published : 26 August 2020, 06:00 PM
Updated : 26 August 2020, 06:00 PM

পেশাগত কাজে গত ১৫ মার্চ যেতে হয়েছিল দেশের শুরুর বিন্দুতে।  জাতীয় সংসদের এক নম্বর আসন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, সদর ও আটোয়ারি উপজেলা নিয়ে গঠিত; আর এই আসনটিতেই দেখা মিলবে দেশের প্রথম বিন্দুটির।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে দেশের প্রথম বিন্দু বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। আমরা যখন পৌঁছাই তখন  কয়েকজন ওপার থেকে আসছেন। তাদের একজন মোবাইল ফোনে কাকে যেন জানাচ্ছিলেন সে কথাই। দুজন বয়স্ক দম্পতিও  এলেন। এক নারী ভ্রমণকারী সীমানা পার হয়ে এলেন । মুখে মাস্ক । পাথর বোঝাই বড় বড় ট্রাক দেশে ঢুকছে। তবে কাউকে এপার থেকে সীমান্তের ওপারে যেতে দেখলাম না৷

সীমান্তের আমাদের অংশে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি ওই সময়। যে যার মত আসছেন এবং চলে যাচ্ছেন দেশের আনাচে-কানাচে।

এরপর চলে এলাম তেঁতুলিয়ায়। মহানন্দা নদীর পাড় ঘেঁষে তেঁতুলিয়া শহর। বাংলাদেশ ও ভারতের  সীমান্ত রেখা টানা নদীগুলোর একটি মহানন্দা।

নদীতে নুড়ি পাথর তুলতে দেখলাম স্থানীয়দের। উৎসাহী পর্যটকদের কেউ কেউ নদীতে সাঁতরে নিলেন, স্নান সেরে নিলেন। নদীতে তখন স্রোত বেশি নেই; তবে জল স্বচ্ছ অনেকটাই।

নদীটির পাড়েই জেলা পরিষদের ডাক বাংলো। প্রথাগত প্রাচীন ডাকবাংলো। এই ডাক বাংলো চত্বরেই তেঁতুলিয়ার পিকনিক স্পট। এই চত্বরেই  'বেরং কমপ্লেক্স'।

বেরং কমপ্লেক্সেই দেখা মিললো ইতিহাসের দুই মহানায়কের; 'আই হ্যাভ এ ড্রিম' খ্যাত মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র আর পৃথিবীর মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী কন্ঠ মহান বিপ্লবী আর্নেস্তো চে গুয়েভারার। কমপ্লেক্সে দেখা পেলাম জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত চিত্রকর্মের রেপ্লিকারও।

প্রান্তিক এই শহর নামের ছোট্ট লোকালয়টিতে লুথার কিংয়ের উপস্থিতি চমকে দিলেও অস্বাভাবিক মনে হয়নি। তবে অবাক করেছে আর্নেস্তো চে গুয়েভারার উপস্থিতি।  এই কমপ্লেক্সের তথ্যফলক থেকে জানলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ এলাকার (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) জন্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচির অর্থায়নে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে চালু করা আয় বর্ধক প্রকল্প এই বেরং কমপ্লেক্স।  এ কথা বলতেই হবে যে, চে অথবা মার্টিন লুথার কিং অথবা জয়নুল, সব মিলিয়ে রুচির গভীর ছাপ রয়েছে এই কমপ্লেক্সে।

তেঁতুলিয়ায় দুপুরে ডাল-ভাত খেয়ে রওনা হলাম পঞ্চগড়ের পথে। তেঁতুলিয়া থেকে বের হতেই ভারতের চা বাগান। চা বাগানে পানির ফোয়ারা থেকে উছলে উঠে ঝরে পড়ছে জল। দেখলাম বাগানের ভারতের অংশে সেখানকার কর্মীরা চায়ের পাতা তুলছেন। ভারতের অংশের গাছগুলো বিশেষ স্টিকার দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। বাগানটা একেবারেই আমাদের রাস্তা লাগোয়া।


সমরেশ মজুমদারের কালবেলা-কালপুরুষ পড়ে যারা বড় হয়েছেন তাদের কাছে চা বাগান, হাড়িভাসা, ডাহুক নদী বিশেষ কিছু হয়ে আছে। বাংলাবান্ধা আর তেতুঁলিয়ায় এলে সেই  স্বাদ বঞ্চিত হবেন না কেউ।

পঞ্চগড় ফেরার পথে রয়েছে সেই  ডাহুক নদী। মনে আনন্দ জাগবে কালবেলা ও কালপুরুষ উপন্যাসের তুমুল জনপ্রিয় চরিত্র মাছ বাবু অনিমেষ আর মাধবীলতার স্মৃতি বিজড়িত ডাহুকের সংস্পর্শে আসতে পেরে। তবে স্রোতহীন আর অস্বচ্ছ জলের ডাহুক দেখে যে কারো মনে কষ্টও জাগবে।

তেঁতুলিয়া জুড়ে চা বাগান আর এখানে ওখানে ছড়ানো পাথর।  তবে এখানেই না থেমে আরেকটু এগুলেই পড়বে পচাঁগড়; মানে পঞ্চগড়। পঞ্চগড়েই পাবেন হাড়িভাসা যাবার পথ।

এটুকুতেই মন ভরবে না; ভরার কথাও না। পকেটে টাকা না থাকুক, ইচ্ছে তো আছে।  আরো কত জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছে আছে। মহামারী কেটে গেলে ইচ্ছেগুলো পূরণ করতেই হবে।