'জল সবুজে ঢাকা' নামে ২০১৭ সালে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। রাজধানীর ৩১টি মাঠ আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় এই প্রকল্পের আওতায়। খিলগাঁও জোড় পুকুর মাঠে চলছে চলছে সেই আধুনিকায়নের কাজ। মাঠের উন্নয়ন কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টরা যে বেশ তৎপর তা একদিন ঘুরতে গিয়ে বুঝতে পারি।
মাঠে লাগানো সবুজ ঘাসে পানি দেয়া হচ্ছে। সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্য কাজও চলছে। কাজের তদারকি করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটোছুটি করছেন। তারা আশা করছেন দ্রুতই কাজটি শেষ হবে।
মাঠটিকে নতুন করে সাজাতে এর নকশা করেছেন স্থপতি রফিকুল আজম। এখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, ২০১৭ সালের অক্টোবরে কাজের উদ্বোধন হয়েছিল। তবে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার নকশার পরিবর্তন আনা হয়। চূড়ান্ত নকশায় মাঠটির কাজ শুরু হয় এ বছরের প্রথম দিকে।
৬৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪৭ মিটার প্রস্থের মাঠটির কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে।
মাঠের দায়িত্বে থাকা প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান বলেন, "প্রথম প্যাকেজে থাকছে মাঠ সংস্কার, সবুজ ঘাস বোনা, চারদিকে ১৬ ফুট বিশিষ্ট লোহার নেটের প্রাচীর, এলইডি লাইট লাগানো ও মাঠের পাশের ড্রেনের সংস্কার কাজ।
"প্রথম প্যাকেজের কাজ আর কয়েকদিন পরেই শেষ হবে। দ্বিতীয় প্যাকেজে থাকবে মাঠের বাইরের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। এর মধ্যে থাকবে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কিডস জোন, পানির ফোয়ারা, কফি শপ ও মাঠের দেখভালের জন্য কন্ট্রোল রুম।"
কিডস জোনের আয়তন হবে ১৭৬ ফুট বাই ৩১ ফুট আয়তনে কিডস জোন হবে জানিয়ে জাহিদ হাসান বলেন, "এখানে শিশুদের খেলার জন্য দোলনা, সিঁড়িসহ বিভিন্ন উপকরণ থাকবে। থাকবে নানা ধরণের সৌন্দর্যবর্ধন গাছও। যার চারদিকে বৃত্তাকারে মোজাইক করা থাকবে। যেন এর উপরে বসে বিশ্রাম নেয়া যায়।"
মাঠের বাইরে ডাস্টবিন থাকায় এর চারপাশে অসহনীয় দুর্গন্ধের অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর। সেগুলো ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে পানির ফোয়ারা।
দ্বিতীয় প্যাকেজের কাজ শেষ হতে মাস দুয়েক লাগবে বলে জানালেন মাঠে কর্তরতরা। কাজ শেষে মাঠ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বলেন, "মাঠের ভেতরে ২৪টি ও বাইরে ২৪টি এলইডি লাইট বসানো হবে। মাঠে পানি দেওয়ার জন্য চারপাশে থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা (স্প্রিং কিলার পয়েন্ট)।"
মিরপুরের জাতীয় ক্রিকেট মাঠের আদলে এখানে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
এতে মুষলধারে বৃষ্টির সামান্য পরেই পানি নিচে গড়িয়ে ড্রেনে চলে যাবে। মাঠের চারপাশে হাঁটার জন্য ওয়াকিং ওয়ে থাকবে। এটি মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হবে।
প্রতিবন্ধী শিশুদের আসা-যাওয়ার জন্য বিশেষ পথ (র্যাম্প) থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মাঠ ও মাঠের বাইরে থাকবে ১৪টি সিসি ক্যামেরা।
মাঠটির সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন মো. সুরুজ মিয়া। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে লাগানো ঘাসের পরিচর্যা করছেন বিরামহীনভাবে। কথা হলো সুরুজ মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, "ঘাস পুরোপুরি বড় হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। তারপর মেশিন দিয়ে সেগুলো সুন্দর করে ছেঁটে দেওয়া হবে।"
জোড় পুকুর মাঠের কাজ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন বলেন, "পুরো কাজ শেষ হতে আরো দু'মাস সময় লাগবে।"
এরপর কাজটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাদের বুঝিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, "মাঠ দেখভালের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। মাঠের বাইরে কোনো দোকানপাট থাকবে না।"
পুরো কাজটি শেষ হলে আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন একটি সবুজ মাঠ উপহার পাবে এলাকাবাসী, এমনটাই প্রত্যাশা করছে স্থানীয়রা।