Published : 16 Nov 2012, 10:37 PM
আমাদের সময়-৮ পৃষ্ঠা, ২ টাকা। নাঈমুল ইসলাম খানের সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশের পর দারুনভাবে জনপ্রিয়তা পায় পাঠকদের কাছে। এর মূল কারণ ছিলো ২টাকা। ২ টাকায় পত্রিকার কিনে পড়া যায়?? আর ঢাকা শহরের জ্যামে বসে পড়ার জন্যও পাঠক পড়তে শুরু করে আমাদের সময়। নতুন কোন আইডিয়া যখন জনপ্রিয়তা পায় তখনই মনে হয় তা ধ্বংসের দিকে যায়। ব্যাপক সার্কুলেশনের কারণে আমাদের সময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে। খবর ছোট হতে থাকে ক্রমশ। জনপ্রিয়তা হারায়। মানুষ যখন নতুন কিছুর সন্ধান করছিলো তখন বাংলাদেশ প্রতিদিন মাঠে নামে শাজাহান সরদার এর সম্পাদনায়। ১২ পৃষ্ঠা ৩ টাকা। প্রতিদিন খবরের বাইরেও আলাদা ৪ পাতা ফিচার। মানুষ তো এই চায়, আমাদের সময় এর চেয়েও দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের এই পত্রিকা। একচেটিয়া বাজার নিয়ে নেয় বাংলাদেশ প্রতিদিন। আমাদের সময় অনেকটাই মাঠের বাইরে চলে যায়।
পত্রিকা বিক্রি নিয়ে মামলায় জড়িয়ে পড়েন নাঈমুল ইসলাম খান। এইভাবে ধীরে ধীরে আমাদের সময় পত্রিকার নাঈমুল ইসলাম খান অধ্যায় এক পর্যায়ে শেষ হয়ে যায়। সম্পাদক হিসেবে রাত ১২টার পরের টিভি টকশো গুলোতে ব্যাপক চাহিদা ছিলো নাঈমুল ইসলাম খানের। এখনো তার কিছুটা আছে তবে আগের মত জমজমাট নয়। খান সাহেব সম্পাদক হিসেবে বেশ কিছু নতুন বিষয়ের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথমত ৮ পাতায় পুরো পত্রিকা। সেই সাথে সবগুলো খবরের সাথে রিপোর্টারের পুরো নাম এবং শেষে সাব এডিটরের নাম জুড়ে দেয়ায় এই পত্রিকার সাংবাদিকরা অল্প সময়েই বাজারে পরিচিতি পান। আরেকটা ব্যাপার ছিলো পত্রিকাটি শুধুই সংবাদের ছিলো। সম্পাদকীয় বলে কোন কিছু এতে কোন কালেই ছিলোনা। মাঝে মাঝে প্রথম পাতায় সম্পাদকের বিশেষ লেখা ছাপা হতো। তাতে যাবতীয় বিষয় থাকতো। যেমন একবার পড়েছিলাম সম্পাদকের গলা ব্যাথা তাই ফোন রিসিভ করতে পারছেন না, টকশো তেও যাচ্ছেন না, তাই কেউ যেন তাকে ফোন না করে বা ফোনে না পেয়ে বিরক্ত না হয় বরং ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে জাতীয় একটি লেখা।
যাই হোক আমাদের সময় এর প্রায় নিভু নিভু পর্যায়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সার্কুলেশন আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়। এর মাঝে আশিয়ান গ্রুপ ১২ পাতার আরেকটি পত্রিকা নিয়ে আসে মানকন্ঠ। বাংলাদেশ প্রতিদিন এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শাজাহান সরদার, ল্যাবএইড গ্রুপের পত্রিকা সম্পাদনার জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাড়েন এবং পরবর্তীতে মানবকন্ঠ এর দায়িত্ব নেন।
২ থেকে ৪ টাকার বাজারে আরেকটি পত্রিকার র্যাংগস গ্রুপের সকালের খবর। ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পর সম্ভাবণাময় এই পত্রিকাটি এখন তার স্থিতাবস্থা পার করছে। কয়েকজন সম্পাদক রদবদলের পর র্যাংগস গ্রুপের মালিকপক্ষ থেকে রোমো রউফ চৌধুরী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, আর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে আছেন সম্ভবত শাহনেওয়াজ দুলাল। তবে ৮ টাকা থেকে কমতে কমতে ৪ টাকায় এসে সকালের খবর কিন্তু বাজার ধরতে পেরেছে। বড়দের খেলায় না পারলেও ছোটদের খেলায় ভালো খেলোয়াড় হিসেবে তার টিকে থাকার সম্ভাবণা তৈরি হয়েছে।
এখন সবচেয়ে কম দামী পত্রিকা আমাদের সময় ২ টাকা। আর বাংলাদেশ প্রতিদিন ৪ টাকায় এই বাজারের রাজা। মানবকন্ঠ প্রত্যাশা তৈরি করলেও প্রতিযোগিতা করতে পারছেনা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের বদলে সে প্রতিযোগিতা করছে সকালের খবর এর সাথে।
আমাদের সময় ব্যাপক ভাঙাগড়ার পর আবু হাসান শাহরিয়ার এর সম্পাদনায় বেশ সুসজ্জিত হয়েছে। পুনর্জন্ম বলা যায়। পত্রিকাটি পড়তে এখন আরাম লাগে। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন নেই। মোটামুটি ছোট বড় সব খবরই আছে। সংবাদের ভাষা এবং উপস্থাপনা যথেষ্ট স্মার্ট। কবি এবং সাংবাদিক হিসেবে আবু হাসান শাহরিয়ার এর ইমেজ পত্রিকার সাথে জড়িয়ে যাওয়ায় তা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন খুব বেশি বাজারে হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় এর বাজার যেভাবে পত্রিকাটি ধসিয়ে দিয়েছিলো সেভাবেই একই ধাঁচের ভিন্ন স্বাদের কোন পত্রিকা এলে বাংলাদেশ প্রতিদিন এর বাজার ও ধসে পড়তে পারে। তবে মানবকন্ঠ এর ধাক্কা আপাতত পত্রিকাটি সামলে উঠেছে। এর পিছনে অবশ্য মানবকন্ঠ এর ভেতরের অস্থিরতা অনেকাংশে দায়ী। ঠিকঠাক টিকে থাকলে ছোট পত্রিকার বাজারে বড় খেলোয়াড় হতে পারে সকালের খবর। পত্রিকাটির সংবাদের মান এবং উপস্থাপনা ভালো। সবচেয়ে আকর্ষনীয় জায়গা হচ্ছে পত্রিকার ছবি। দারুন সুন্দর ছবি পোস্টিং। পাঠকের জনপ্রিয়তা পাবার সম্ভাবণা আরও রয়েছে পত্রিকাটির।