দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে অনিরাপদবোধ করেন ৬৬.৯% নারী 

বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলা অঞ্চলের উপর ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2024, 01:28 PM
Updated : 7 March 2024, 01:28 PM

দুর্যোগের সময় নিরাপত্তা এবং যথাযথ সুবিধার অভাবে ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী ও কিশোরীরা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হন না বলে একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে হাসপাতাল থাকলেও পর্যাপ্ত সেবার সুযোগ না থাকায় এসব অঞ্চলের ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ সঠিক সময়ে চিকিৎসা পান না, কেননা ৭০ শতাংশ সময়ে দুর্যোগের কারণে হাসপাতাল বন্ধ থাকে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের ক্রাউন প্লাজায় উপকূলীয় অঞ্চলের নারী ও শিশুদের উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব নিয়ে আইআরসির ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলা অঞ্চলের উপর তৈরি করা এ প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় এসব অঞ্চলের অনেক নারী নীরবে যৌন সমস্যা নিয়েই জীবনযাপন করছেন, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির ডেপুটি ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) রেবেকা ওকেচো বলেন, দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, যেমন- যৌন হয়রানির মত ঘটনা ‘অহরহ’ ঘটছে।

গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “সঙ্গীর দ্বারা সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে শীর্ষে আছে সাতক্ষীরা অঞ্চল। অনেক ক্ষেত্রে দুর্যোগের পর দারিদ্র্যের কারণে জোরপূর্বক গর্ভপাতের শিকার হচ্ছেন নারীরা। 

“মূলত দারিদ্র্য (৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং জীবিকা হারানোর (৬৮ শতাংশ) মত বিষয়গুলো পারিবারিক ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা হওয়ার পেছনে মূল কারণ।”

অনুষ্ঠানে পটুয়াখালীর রাঙাবালি থেকে আসা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তিনি নিরাপদ বোধ করেন না।

“ওখানে গোপনীয়তার অভাব বোধ করি। বিশেষ করে টয়লেটের ব্যবহার, পোশাক বদলানোর জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এক্ষেত্রে নারীদের জন্য, বিশেষ করে কিশোরীদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা গেলে খুব ভালো হত।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অনেক মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। আমরা চেষ্টা করছি, সেখানে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখার।

“অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে মায়েদের জন্য আমরা শিশুদের দুধপান করানোর আলাদা ব্যবস্থা করেছি। আমরা দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে সহনশীল অবকাঠামো তৈরি করছি, যেন সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।”

ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান বলেন, “আমাদের উদ্যোগগুলো যেন সবার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়, যেন সব ধরনের, লিঙ্গের, জাতির মানুষেরা সুযোগসুবিধাগুলো পায় এবং তাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”

উপকূলীয় অঞ্চলে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘জাগো নারী’র প্রধান হোসনে আরা হাসি বলেন, “বাংলাদেশের একটি বড় অংশ উপকূলের সাথে জড়িত, এই অংশটির মানুষ নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে যাচ্ছে ।”

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের পরিমাণ যে বেড়েছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সরকার এবং এনজিওগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের এখনও অনেক অভাব রয়েছে। এ কারণে অনেক কাজ হলেও সেগুলো খুব বেশি সুফল বয়ে আনছে না। আমাদের একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে এই মানুষগুলোর জন্য।”