আগামী ২০ অক্টোবর শুরু হওয়া উৎসবকে সামনে রেখে ২২টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
Published : 12 Oct 2023, 10:04 PM
শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিটি মণ্ডপ বা মন্দিরে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ক্যামেরাগুলোর রাতে ভিডিও ধারণের সক্ষমতাও চায় বাহিনীটি।
নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা আয়োজনে বৃহস্পতিবার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আগামী ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবকে ঘিরে রাজধানীর পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে এসেছে মোট ২২টি নির্দেশ।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ নিজেরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটিও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, “পূজার দিনগুলোতে প্রত্যেক মণ্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ ও আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশি টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিগত দুর্গোৎসবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পদক্ষেপগুলো সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে দাবি করে ডিএমপি বলে, “এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি সর্বস্তরে সচেতনতাবোধ তৈরি করা গেলে পুলিশ ও পূজা উদযাপন কমিটি বা ভক্তদের যৌথ উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে উৎসবমুখর এবং নিরাপদ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এই বাণীকে আরও সমুন্নত করা সম্ভব হবে।”
আর কী কী নির্দেশনা
মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ছাড়া অন্য যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো:
>>প্রতিটি মণ্ডপের জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং তাদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও আর্মড ব্যান্ড নির্ধারণ করে দেওয়া।
স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা স্থানীয় থানায় প্রেরণ ও থানার অফিসারের উপস্থিতিতে ব্রিফিং করার ব্যবস্থা করা।
>>মণ্ডপের প্রবেশ ও বাইরের গেট মজবুতভাবে স্থাপন, যেসব মণ্ডপে সীমানা দেয়াল নেই সেসব ক্ষেত্রে বাঁশের শক্ত বেড়া নির্মাণ এবং নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা প্রবেশ পথের ব্যবস্থা করা।
>>স্থানীয় কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন এবং তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।
>>সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচারের ব্যবস্থা করা।
>>প্রতিটি মণ্ডপে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন এবং গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা।
>> বৈদ্যুতিক কাজে নিম্নমানের তার ব্যবহার না করা।
>>অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে মণ্ডপে মোমবাতি, আগরবাতি বা আরতির সময় সাবধানতা অবলম্বন করা।
>> উৎসবে মাদকের ব্যবহার, জুয়া খেলা ও আতশবাজি বন্ধ রাখা।
>> প্রতিটি মণ্ডপ বা মন্দিরের জন্য পরিদর্শন রেজিস্টার প্রস্তুত এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।
>> প্রতিটি মণ্ডপ বা মন্দির ও পুরো এলাকায় পর্যাপ্ত ও বিকল্প আলোর (জেনারেটর) ব্যবস্থা রাখা।
>> মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ব্যাগ বা পোটলা ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা। সন্দেহজনক কোনো ব্যাগ বা পোটলা পড়ে থাকতে দেখলে বা দৃষ্টিগোচর হলে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে তাৎক্ষণিক অবহিত করা।
>> আজান ও নামাজের সময় এবং মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা।
>> মণ্ডপ সংলগ্ন স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মণ্ডপ ও আশপাশ এলাকায় মেলা না বসানো।
>> পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জন্য ওয়াশরুমসহ স্বাস্থ্যকর আবাসনের ব্যবস্থা রাখা।
>> পূজার প্রসাদ প্রস্তুত করার সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং মণ্ডপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।
>> মণ্ডপকেন্দ্রিক কোনো বিরোধ থাকলে তা পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বযয় করে নিষ্পত্তি করা।
>> বিজয়া শোভাযাত্রায় উচ্চ বাদ্যযন্ত্র সেট (পিএ) ব্যবহার না করা।
>> শোভাযাত্রা চলাকালে যেন কোনো ফাঁকা জায়গা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
>> প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা এবং বিসর্জনের সময় পানিতে পড়ে প্রাণহানীর মতো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের নৌকায় উঠা নিরুৎসাহিত করা।
>>২ ৪ অক্টোবর রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বেলা তিনটার আগেই ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। সাড়ে তিনটার মধ্যে সেখান থেকে শোভাযাত্রা শুরু করা এবং সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে প্রতিমা ওয়াইজঘাটে পৌঁছানো। ওয়াইজঘাটে সব প্রতিমা রাত আটটার মধ্যে বিসর্জন শেষ করা।
>> কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা তৈরি হলে দ্রুত পুলিশকে জানানো এবং জরুরি প্রয়োজনে পূজা উদযাপন কমিটি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট থানার ফোকাল পয়েন্ট অথবা ৯৯৯ এর সেবা গ্রহণ করা।