মৃত্যুর ২ বছর পর শিল্পী মুর্তজা বশীরকে চিঠি পাঠালো ঢাবি

“যিনি চিঠিটা পাঠিয়েছেন, সম্ভবত তিনি মৃত্যুর বিষয়টা জানতেন না” বলেন রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রশাসন-১ সেকশনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2022, 04:08 PM
Updated : 20 Sept 2022, 04:08 PM

মৃত্যুর দুই বছর পর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে খ্যাতিমান শিল্পী মুর্তজা বশীরকে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিল্পীর দুই মেয়ে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ১৫ অগাস্ট মারা যান শিল্পকলার অন্যতম নক্ষত্র মুর্তজা বশীর।

মঙ্গলবার ঢাবির রেজিস্ট্রার অফিস থেকে চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের সিলেকশন বোর্ডে থাকার জন্য চিঠি যায় রাজধানীর মনিপুরী পাড়ায় মুর্তজা বশীরের ঠিকানায়।

চিঠিতে বলা হয়, “ভাস্কর্য বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য সিলেকশন বোর্ডের একটি সভা আগামী ০৩.১০.২০২২ তারিখ সোমবার বিকাল ৪ ঘটিকায় উপাচার্য মহোদয়ের অফিস কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নীতিমালা অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হবে।

“সিলেকশন বোর্ডের সম্মানিত সদস্য হিসাবে অনুগ্রহপূর্বক এই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।”

নিয়োগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ওই চিঠিতে বলা হয়, “যদি অনিবার্য কারণবশতঃ আপনি সভায় উপস্থিত হতে অপারগ হন, তাহলে প্রার্থীর পদোন্নতি সম্পর্কে আপনার লিখিত মতামত সরাসরি অথবা গোপন খামে উপাচার্য মহোদয়ের নিকট পাঠানোর জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।”

জানতে চাইলে মুর্তজা বশীরের মেয়ে মুনীরা বশীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগেও এরকম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি এসেছে। আমরা তাদের জানিয়েছি। আজকেও কুরিয়ারের মাধ্যমে এই চিঠি এসেছে।

“আজকের চিঠিটা পেয়ে আমি আর সহ্য করতে পারিনি। পরে আমার বোনকে বললাম, ও একটা ই-মেইল পাঠিয়েছে তাদেরকে। এটা তো ঠিক না। এর প্রতিবাদ করা উচিত। তারা এতটা দায়িত্বহীন কেন হবেন?”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠানো ওই চিঠিতে শিল্পীর আরেক মেয়ে মুনীজা বশীর লিখেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে মুর্তজা বশীরের মৃত্যুর খবর জানা না থাকা দুর্ভাগ্যজনক!!!!”

এর আগে নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অব্যবস্থাপনার’ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুনীরা।

ওই পোস্টে গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারপার্সন নাসিমা হক মিতুর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও প্রকাশ করেন তিনি।

চিঠিতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন সহকারী অধ্যাপক নাসিমা হক।

ফেইসবুক পোস্টে মুনীরা বশীর লেখেন, “কি করা উচিত? বাবা কি কবর থেকে সভায় উপস্থিত হয়ে লিখিত মতামত দিবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অব্যবস্থাপনায় কি করণীয়? কি গালি দেয়া উচিত?

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) হয়েছেন প্রবীর কুমার সরকার, তিনি কি জবাবদিহিতা করবেন?”

নাসিমা হক মিতুর বিষয়ে তিনি পোস্টে লিখেছেন, “ড. নাসিমা হক মিতু, সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, ভাস্কর্য বিভাগ, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

“উনি কি মুর্তজা বশীরকে চিনেন না? চারুকলা অনুষদের হয়েও একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এই অসভ্যতা করার দুঃসাহস তিনি কোথায় পান?”

বোনের ওই পোস্টে মুনীজা বশীর কমেন্টে লিখেছেন, “আমরা মূর্খ জাতি জানতাম, কিন্তু এতটা মূর্খ তা জানতাম না”।

এরপর বড় বোনের পোস্ট ফেইসবুকে শেয়ার করে তিনি লেখেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এধরনের চিঠি হাস্যকর এবং হতাশাজনক। আমরা কোথায় আছি? খুবই দুঃখজনক। ছিঃ।”

চিঠির বিষয়ে ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. নাসিমা হক মিতু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো ক্যান্ডিডেট।  নিয়োগ বোর্ডে কারা থাকবেন, সেটা তো আমার কাছে প্রকাশ করা হবে না।

“চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি ঠিক আছে, কিন্তু আমি ক্যান্ডিডেট হওয়ায় এটা জানার সুযোগ নেই। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যের চিঠি পাঠায় রেজিস্ট্রার অফিস। এ বিষয়ে তো আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই।”

নিয়োগ বোর্ডের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি এখনও চিঠি পাননি বলে জানান নাসিমা হক মিতু।

মুর্তজা বশীরকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টা আমার মনে নেই। আগামীকাল ফাইল না দেখে বলতে পারব না।

“কারো ফাইল কী রেজিস্ট্রারের মুখস্ত রাখা সম্ভব? প্রতিদিন অসংখ্য ফাইল স্বাক্ষর করতে হয়, সবকিছু তো আর পড়ে পড়ে স্বাক্ষর করা যায় না।

“চিঠি ইস্যুর আগে অনেকগুলো প্রক্রিয়া হয়, বিষয়টা তো বিভিন্ন সেকশন হয়ে আসে। বিষয়টা ওই সেকশনে যোগাযোগ করতে হবে।”

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রশাসন-১ সেকশনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি ‘অসাবধানতাবশত’ ঘটতে পারে।

“এ বোর্ডগুলো অনেক আগে ঠিক করা থাকে তো, যখন আমরা এ ধরনের চিঠি পাঠাই, তখন কেউ মৃত হলে বোর্ডের কমিটির নামের পাশে মৃত লিখে দেওয়া হয় এবং ওই ব্যক্তিকে চিঠি পাঠানো হয় না। এখন বিষয়টাতে যিনি চিঠি পাঠিয়েছেন, তিনি হয়ত খেয়াল করেননি।”

কে চিঠি পাঠিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিয়োগ বোর্ডের সদস্য রেজিস্ট্রার অফিসই চিঠি ইস্যু করে। আমাদের মধ্যে কে কাজটা করেছে সেটা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

“যিনি চিঠিটা পাঠিয়েছেন, সম্ভবত তিনি মৃত্যুর বিষয়টা জানতেন না।”

মিজানুর রহমান বলেন, “কাজের চাপে রেজিস্ট্রার মহোদয় যদি স্বাক্ষর করেও থাকেন, তিনি হয়তো খেয়াল করেন নাই। যাই হোক, এতে আমরা আসলে দুঃখিত।

“কারণ মৃত ব্যক্তির কাছে চিঠিটা গেলে ওনাদের অস্বস্তি লাগারই কথা। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

আরও খবর

Also Read: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর আর নেই