শ্যামপুরে উদ্বোধন হল রাসায়নিকের অস্থায়ী গুদাম

পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর করার সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 02:58 PM
Updated : 4 June 2023, 02:58 PM

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরের অংশ হিসেবে ঢাকার শ্যামপুরে একটি অস্থায়ী রাসায়নিকের গুদাম উদ্বোধন করা হয়েছে। 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে এ গুদাম উদ্বোধন করা হয়। 

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস রোববার দুপুরে এই গুদাম উদ্বোধন করেন। 

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, “নিমতলী ও চুরিহাট্টা ট্রাজেডির যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কেমিকেল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

“সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তায় এই রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। অস্থায়ীভাবে নির্মিত এই রাসায়নিক গুদামে শিগগির প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হবে। টঙ্গীতেও এরকম একটি গুদাম নির্মিত হচ্ছে।” 

বর্তমান সরকার ‘ব্যবসাবান্ধব’ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ইতোমধ্যে দেশে ব্যবসা ও শিল্পসহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। 

“সরকার অস্থায়ীভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বিশেষ করে পুরান ঢাকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমির ওপর ‘বিসিক কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেখানে আমরা ভূমি উন্নয়ন করেছি। বাউন্ডারি নির্মাণ ও অন্যান্য ভৌত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছি। প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন আছে।” 

মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “রাসায়নিক দ্রব্যাদি, বিস্ফোরক দ্রব্যের জন্য আলাদা গুদামঘরের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরান ঢাকা থেকে এগুলো স্থানান্তর করা হবে। আমি আশা করব, দ্রুত যেন এই নীতিমালাটি (পুরান ঢাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্থানান্তর নীতিমালা) প্রণয়ন করা হয়। 

“এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বারসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি যারা এখানে আছেন তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা করে দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। এ নীতিমালা করতে যেন আবার কয়েক বছর লেগে না যায় সেজন্য আমি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে অনুরোধ করব। একটি সুনির্দিষ্ট সময়- যেমন ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং নীতিমালাটি যেন ব্যবসাবান্ধব হয়।”

মেয়র তাপস জানান, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ওই এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। তালিকায় ১ হাজার ৯২৪টি রাসায়নিকের গুদাম থাকার তথ্য পাওয়া যায়। 

এর মধ্যে কর অঞ্চল-৩ এ এক হাজার ৩০১টি, কর অঞ্চল-৪ এ ৫৮৫টি এবং কর অঞ্চল-৫ এ ৩৮টি রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কর অঞ্চল-৩ এর ইসলামবাগে পাঁচশর মত রাসায়নিক গুদাম রয়েছে। 

পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম একটি নিরাপদ জায়গায় দ্রুততম সময়ে স্থানান্তরের লক্ষ্যে শ্যামপুরের উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেডের জায়গায় ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। 

মেয়র তাপস বলেন, “যারা এখানে গুদামে আসবেন, তাদের কিন্তু আবারও বিনিয়োগ করতে হবে। তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় তারা যেন উৎসাহিত বোধ করেন, কিছু ছাড় দিয়ে হলেও সেভাবে যেন নীতিমালাটি করা হয়। এমনভাবে যেন কোন নীতিমালা করা না হয়, যেটা বাস্তবতার নিরিখে তাদেরকে আরও নিরুৎসাহিত করবে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে আমি অনুরোধ করব। 

“এ বিষয়ে আমাদের তরফ হতে সকল ধরনের সহযোগিতা থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, সকল বিপজ্জনক রাসায়নিক সামগ্রী ধীরে ধীরে স্থানান্তর হবে। একটি দুর্যোগপূর্ণ নগরী হিসেবে নয়, আমরা চাই, ঢাকা হোক দুর্যোগ সহনশীল বাসযোগ্য একটি নগরী।”

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, “দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে আবারও পেছনের দিকে নিয়ে যেতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য স্বাধীনতাবিরোধীদের নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।” 

গুদাম উদ্বোধনকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, প্রকল্পের ঠিকাদার নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মো. আব্দুল্লাহ আল মাকসুস এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। 

শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, প্রকল্পটি ২০১৯ সালের মার্চে শুরু হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা হলেও প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। 

এর মধ্যে সরকারি অনুদান ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বিসিআইসি দিয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। 

এ প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ৫৪টি গুদাম ও দুটি তিনতলা অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।