২১ হাজার ১৩৭ জন ভোটারের মধ্যে রায় দিয়েছেন ৯ হাজার ৬৩৫জন।
Published : 29 Feb 2024, 11:19 PM
ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি, পরস্পরকে দোষারোপ, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে ভোট দিতে না পেরে ফিরে যাওয়া, ভোট দিতে গিয়ে নাজেহাল হওয়া- সবই হল ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে।
দুই দিনের ভোট শেষে বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল জানান, প্রথম দিন ভোট পড়েছে ৪ হাজার ২৩০ টি, দ্বিতীয় দিন পড়েছে ৫ হাজার ৪০৫টি। অর্থাৎ দুই দিনে ভোট দিয়েছেন ৯ হাজার ৬৩৫ জন।
শুক্রবার দুপুরের পর ভোট গণনা শুরু হবে।
এবারের নির্বাচনে ভোটারদের ৫০ শতাংশও রায় দেননি।
এবার ভোটার সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ১৩৭ জন। তবে সমিতিতে সদস্য ৩০ হাজার ১২১ জন। সবাই ভোটার হতে পারেননি বারের চাঁদা পরিশোধ না করার কারণে।
দুইদিন সকাল ৯ টা থেকে মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। তবে দ্বিতীয় দিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল দেখা দেওয়ায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে।
এই কারণে শেষ দিন সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়।
শেষ দিনে শেষ দুই ঘণ্টায় ব্যালট পেপার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সিল মারার অভিযোগ উঠেছে। ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগও আছে। হট্টগোলের কারণে অনেক আইনজীবী কেন্দ্র ও বুথের চৌকাঠ থেকে ফিরে গেছেন। অনেকে কেন্দ্রেই আসেননি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যের নীল প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সভাপতি পদের প্রার্থী আব্দুর রহমান হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. আনোয়ার শাহাদাত শাওন।
এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আবুল কালাম মোহাম্মাদ আক্তার হোসেন, সহ-সভাপতি পদে মো. আবু তৈয়ব, ট্রেজারার পদে মো. ওমর ফারুক, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. মাসরাত আলী তুহিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান বাবু, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির সবুজ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মনিরা বেগম মনি, অফিস সম্পাদক পদে সরোয়ার জাহান, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. ওয়াকিলুর রহমান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে প্রদীপ চন্দ্র সরকার এবং তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে সৈয়দা ফরিদা ইয়াছমিন জেসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সদস্য পদে এমদাদুল হক এমদান, হাফিজ আল মামুন, কাজী হুমায়ুন কবির, মাহমুদুল হাসান, আব্দুর রহমান মিয়া, মো. ইমরান হাসান, মো. মোহসিন উদ্দিন, মোহাম্মাদ মইন উদ্দিন বিপ্লব, শাহিন আহমেদ রুপম ও সুমন আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন।
নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মো. খোরশেদ মিয়া আলম, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মো. আব্দুর রাজ্জাক, সহ-সভাপতি পদে মো. সাহিদুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ পদে আব্দুর রশিদ মোল্লা, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. জহিরুল হাসান মুকুল, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ মোহাম্মাদ নজরুল হোসেন (অপু), লাইব্রেরি সম্পাদক পদে মোস. নারগিস পারভীন মুক্তি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নুরজাহান বেগম বিউটি, অফিস সম্পাদক পদে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মোহাম্মাদ মোবারক হোসেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে মাহবুব হাসান রানা এবং তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে মো. মাজহারুল ইসলাম মারুফ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নীল দলে সদস্য পদে লড়ছেন আলী মোরতুজা, গাজী তানজিল আহমেদ, মো. আনোয়ার হোসেন চাদ, মো. আসিফ, জাবেদ হোসেন, খালিলুর রহমান, মো. সামসুজ্জামান দিপু, মোহাম্মাদ আলী বাবু, মুক্তা বেগম ও রেজাউল হক রিয়াজ।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির গত বছরের (২০২৩-২০২৪) কার্যকরী কমিটি নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেল ২৩টি পদের সব কটিই জিতে নেয়।
ভোট গ্রহণ বন্ধ দুই ঘণ্টা
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভোট কেন্দ্রে একজন ভোটারের কাছে নির্ধারিত ব্যালট পেপারের বদলে নকল স্ক্যানিং করা ব্যালট পেপার পাওয়া যায়।
এ সময় ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ সময় একজন প্রবীণ আইনজীবীর বিরুদ্ধেও জাল ভোটের অভিযোগ ওঠে।
পরে নির্বাচন কমিশন আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে রুদ্ধ দ্বার বৈঠকে বসে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিকাল তিনটার দিকে আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, শেষ দুই ঘণ্টা ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন তারাসহ অন্যান্যরা ব্যালট পেপার নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো সিল মেরে বাক্সে ঢুকাতে থাকেন।
আইনজীবী জাকারিয়া হায়দার, গাফ্ফার হোসেন ইমনসহ প্রায় ১৫ জন আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে হৈচৈ ও বিশৃঙ্খলার কারণে ভোট না দিয়ে ফিরে এসেছেন।
বিকেলে ভোট গ্রহণ পুনরায় শুরু হলে বিকাল ৪ টার পর আইনজীবী সমিতির সামনে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বিকট শব্দে দুইটি বিস্ফোরণ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী দুলাল মিত্র জানান, এই শব্দে আইনজীবীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। অনেককে দৌড়ে নিরাপদ অবস্থান নিতে দেখা যায়।
কোতয়ালি থানার এসআই আলমগীর আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, “এটি পটকা ছিল।”
কিছুক্ষণ পর আইনজীবী সমিতির সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশন মোখলেসুর রহমান বাদল আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, “সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। কোনোরকম অনিয়ম হয়নি। তবে আইনজীবীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ভোট গ্রহণ নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে আইনজীবীরা সবাই মিলে বসে সেটার সমাধান করা হয়েছে।”