‘পার্সেল প্রতারণায়’ বিদেশি নাগরিকসহ ১১ গ্রেপ্তার

মিরপুর স্টেডিয়ামের গেইটের সামনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত ঢাকা উত্তোলনের জন্য ওই চক্রের কয়েকজন সদস্য একত্রিত হওয়ার তথ্য পেয়ে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2022, 01:10 PM
Updated : 6 Sept 2022, 01:10 PM

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে পার্সেলে উপহার পাঠানোর নামে ‘প্রতারণায়‘ জড়িত বিদেশি নাগরিকসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা ও নারায়ণগঞ্জের ‍রুপগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা হলেন, মো. বিপ্লব লস্কর, মো. সুমন হোসেন ওরফে ইমরান, মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন, ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল, মো. নাজমুল হক রনি, মোসা. নুসরাত জাহান, নাইজেরিয়ার নাগরিক চিডি, এমমানুয়ায়েল, জন, অ্যাঙ্গোলিয়ার নাগরিক উইলসন দ্য কনসেইকাও ও ক্যামেরুনের নাগরিক এনগুয়েগনি পাপিনি।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ২৮টি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, একটি প্রাইভেটকার ও ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকাসহ তিন লাখ ৫০ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া প্রতারণা সম্পর্কিত কথোপকথনের অসংখ্য স্ক্রিনশট ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ২৬৩টি সিম কার্ড জব্দ করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মিরপুর স্টেডিয়ামের গেইটের সামনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত ঢাকা উত্তোলনের জন্য ওই চক্রের কয়েকজন সদস্য একত্রিত হওয়ার তথ্য পায় ডিবি পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে তাদেরক গ্রেপ্তার করে।

তারা দেশি-বিদেশি প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন শহরের সাধারণ মানুষের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ও ইমেইল সংগ্রহ করে ফেইসবুকে ইউএস (যুক্তরাষ্ট্র) আর্মি ও নেভিসহ বিভিন্ন পরিচয়ে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে।

“পরবর্তীতে তারা দামি উপহার, স্বর্ণালংকার ও বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার বা ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে লোভনীয় ছবি পাঠায়। পরে পার্সেল পাঠানোর নামে ভুয়া পার্সেল ও রিসিটের ছবি পাঠায়।”

তিনি আরও বলেন, প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকে। চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশিরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর নম্বর থেকে কল দিয়ে নিজেকে কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায় যে, আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে।

“কাস্টমস হাউজ হতে তা ছাড়াতে ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। টাকা পরিশোধের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর মেসেজের (বার্তা) মাধ্যমে প্রতারিত ব্যক্তিকে পাঠায়।”

প্রতারণার বিবরণে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “পার্সেল পেতে আগ্রহ দেখালে বাংলাদেশি প্রতারকের দাবি করা টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধের পর তারা ফোন করে জানায় যে, তার বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে অবৈধ মালামাল রয়েছে। তাই পার্সেল ছাড়াতে আরও বেশি অংকের টাকা প্রয়োজন।”

হারুন অর রশীদ বলেন, দাবি করা টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে বলে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখায় চক্রটি।

“মামলার ভয়ে প্রতারকের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পূনরায় টাকা পাঠালে ফোন করে পুলিশের ভয় দেখিয়ে আরও বেশি টাকা দাবি করে। টাকা আদায়ের পর প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে ব্লক করে দেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, প্রতারণায় ব্যবহারের জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে অসংখ্য অ্যাকাউন্ট খোলে। সে সকল অ্যাকাউন্টের কার্ড এবং চেক বই নিজেদের হেফাজতে রেখে রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথ ও ব্যাংকের শাখা হতে টাকা উত্তোলন করে।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ভাগবাটোয়ারার সম্পূর্ণ কাজ করে মো. বিপ্লব লস্কর। সে নিজে বিদেশি নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশি সহযোগীদের নির্দেশনা দেন বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

তাদের বিরুদ্ধে মিরপুর ও রূপনগর থানায় মামলা হয়েছে।