আওয়ামী লীগ আমলে ‘বেশি’ সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন: বিএফইউজে সভাপতি ফারুক

তদন্তকারী পুলিশের ইউনিট র‌্যাবের ‍উপর আর আশা রাখতে না পারার কথা বলছেন সাংবাদিক নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2023, 04:34 PM
Updated : 10 Feb 2023, 04:34 PM

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর একাংশের সভাপতি ওমর ফারুকের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পূর্তি। কিন্তু এতদিনেও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা করতে পারেনি তদন্তকারী পুলিশের বিশেষ ইউনিট র‌্যাব। এ পর্যন্ত তারা আদালতে বারবার সময় চেয়েছে।

সমাবেশে ওমর ফারুক বলেন, “সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। সারাদেশে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। কোনো বিচার আপনারা করছেন না। কেন সাংবাদিকদের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করছেন?”

সাগর-রুনিসহ আরও যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের সবার বিচার চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তার অভিযোগ, “এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি হত্যা, নির্যাতন, বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।“

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি কি অন্তত একটা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? কেন একটা বিচারও করছেন না? আপনি ভাইবেন না, সাংবাদিকদের হাত থেকে রেহাই পাবেন।”

সাংবাদিকতায় জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই মন্তব্য করেন সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার বলেন, “১১ বছর আগে সাগর- রুনি হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ১১ বছর একই সরকার ক্ষমতায়। অথচ সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয় না।

“কোথায় যাব আমরা? সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র দেখছে না।”

বিএফইউজে সভাপতি ফারুক সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “নবম ওয়েজবোর্ড আইন সরকার করেছেন। আমরা আইন মেনেছি। কিন্তু মালিকরা মানেন না।

“আপনারা মালিকদের বলে দেন নবম ওয়েজবোর্ড না মানলে সংবাদমাধ্যম চালানোর দরকার নেই। দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে আমরা কীভাবে জীবনযাপন করছি তার কোনো খোঁজ কেউ নিচ্ছেন না।”

ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, “বিদেশ থেকে ফরেনসিক টিম আনা হয়েছিল। তারপর বলা হয়েছিল, ঘাতককে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানানো হয়েছিল, যারা হত্যা করেছে। আজ পর্যন্ত সেই দুজনের নাম জানতে পারলাম না।”

তদন্তকারী সংস্থার উপর থেকে ক্রমেই আশা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। গত ১১ বছর ধরে বারবার আদালতের সময় নিয়েও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারছে না তদন্তের দায়িত্বে থাকা র‌্যাব।

সবশেষ গত ৪ জানুয়ারি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯৫ বারের মত সময় চেয়েছে তারা। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ৫ মার্চ নির্ধারণ করেছেন আদালত।

এদিকে সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবীতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ডিইউজের প্রতীকি অনশন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত দাবি থেকে সরে না আসার কথা বলেছেন সংগঠনের নেতারা।