বকুলতলার এই উৎসবের আয়োজন করে ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ’, দেশটির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা অংশ নেয় এই আয়োজনে।
Published : 14 Feb 2024, 12:37 PM
এই নগরে কোকিলের কুহু ডাক শোনা যাক বা না যাক, বরাবরের মতই বসন্ত বরণের বাদ্য বেজেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়।
বুধবার সকালে ঋতুরাজকে বরণের সেই উৎসব মাতিয়ে তোলেন কণ্ঠ-নৃত্য শিল্পী ও যন্ত্রীরা। সেখানে শামিল হতে এসেছিলেন সংস্কৃতিকর্মীরা, ছিলেন তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ। নারীদের পরনে ছিল বাসন্তী শাড়ি। খোঁপায় বা কব্জিতে জড়ানো ফুলের মালা। ছেলেরাও সেজেছেন রঙিন পাঞ্জাবিতে।
অনেকে এসেছিলেন গালে আলপনা এঁকে। আবির খেলায় মেতে ওঠেন কেউ কেউ। এসেছিলেন বিদেশিরাও।
বকুলতলার এই উৎসবের আয়োজন করে ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ’। দেশের দশটির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা অংশ নেন এই আয়োজনে।
প্রতি বছরের মত এবারও উৎসবের সূচনা হয় যন্ত্রসংগীতে। সেতারে ‘বসন্ত মুখারী’ রাগ বাজিয়ে শোনান শিল্পী জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপর একে একে গান, নাচ, আবৃত্তি ও বসন্ত কথনে মেতে উঠে উৎসব প্রাঙ্গণ।
বসন্ত কথন পর্বে ‘উদযাপন পরিষৎ’ এর সভাপতি সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, "বসন্ত উৎসব মূলত মিলনের উৎসব। বসন্ত আমাদের জনজীবনে পালন হয়ে আসছে অনেক বছর ধরে। আমরা এটিকে একটা আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছি কেবল। এবার ভালোবাসা দিবসও একই দিনে এসে মিলেছে। দুটি একই রকমের উৎসব। ফলে এ দুই উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমরা বসন্তবরণ করছি।"
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট তার বক্তব্যে কবি শামসুর রাহমান, শিল্পী ওয়াহিদুল হক, অভিনেতা আলী যাকের, আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফসহ প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “এই আবাহনের মধ্য দিয়ে আমরা মূলত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম, সব মানুষের বাংলাদেশ। ধর্ম-গোত্রের ঊর্ধ্বে গিয়ে সমতার এক বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ গড়ব। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। বসন্তের এই বর্ণিল দ্যুতি সবার মাঝে ছড়িয়ে যাক।"
প্রকৃতির বসন্তকে এই উৎসবের মধ্য দিয়ে নগরজীবনে তুলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ‘উদযাপন পরিষৎ’ এর সহসভাপতি কাজল দেবনাথ।
তিনি বলেন, "এই উৎসব জেলা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ছড়িয়ে যাক।"
উৎসবে বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেন ভাবনা, ধৃতি, নৃত্যম, বহ্নিশিখা, নৃত্যাক্ষ্য, স্পন্দন, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন নাচের দলের শিল্পীরা।
একক সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা মুক্তি গোমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বুলবুল ইসলামসহ অনেকে। আয়োজনে ছিল সাঁওতাল ও চাকমা নাচ।
বসন্ত আবাহন করেন ভাস্বর বন্দ্যেপাধ্যায়, আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। সমবেত সংগীত পরিবেশন করেছে সত্যেনসেন শিল্পী গোষ্ঠী ও সুরের ধারা।
সকালের অনুষ্ঠান শেষ হয় বসন্ত আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। চারুকলা থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে শোভাযাত্রা চারুকলায় ফিরে শেষ হয়। শোভাযাত্রার আগে ছিল রাখী বন্ধন উৎসব।
আয়োজকরা জানান, বসন্ত বরণের বিকেলের পর্ব শুরু হবে বিকাল সাড়ে ৩টায় বেঙ্গল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। পরে গান, নাচসহ নানা পরিবেশনায় অংশ নেবেন শিল্পীরা।
প্রতিবছরের মত এবারও একযোগে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরা দিয়াবাড়ীর লেক সংলগ্ন মাঠে 'বসন্ত উৎসব-১৪৩০' এর অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।