ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে সরকারের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত

“রমজানে বৃষ্টির বিড়ম্বনা ছিল না, এবার সেটা আছে। ধীর গতির পশুবাহীগাড়ি, এটা সমস্যার সৃষ্টি করবেই,” বলেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।

ফাইল ছবি ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে একই সঙ্গে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বৃহস্পতিবার বিআরটিএ এর প্রধান কার্যালয়ে এক প্রস্তুতি সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো জানান তিনি।

কাদের বলেন, “আজকে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো সবাইকে মানতে হবে। সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে।”

চলতি বছর ঈদুল ফিতরের কথা স্মরণ করিয়ে মন্ত্রী বলেন, “গত রমজানে স্মরণাতীতকালের একটা ভালো ঈদযাত্রা আমরা দেখেছি। সবাই প্রশংসা করেছে। এখানে একটা সমন্বয় কাজ করেছিল।

“রমজানের ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদ অনেক চ্যালেঞ্জিং৷ এখানে অনেকগুলো বিষয় অন্তরায় হয়ে যায়৷ এগুলো অতিক্রম করা এত সহজ না। এখানে আমাদের চেষ্টা আরও বেশি করতে হবে।”

কাদের বলেন, “রমজানে বৃষ্টির বিড়ম্বনা ছিল না, এবার সেটা আছে। ধীর গতির পশুবাহীগাড়ি, এটা সমস্যার সৃষ্টি করবেই।”

হাইওয়ে পুলিশের জনবলের অভাবের সমস্যা পূরণে জেলা পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান তিনি।

কাদের বলেন, “কোরবানির ঈদের জন্য আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে আমাদের একটা গলার কাঁটা আছে। সেটা হল বিআরটি (গাজীপুর) এবং বৃষ্টি হলে কাদা। এ বছরই আমরা প্রজেক্টটা শেষ করার জন্য কাজ এগিয়ে এনেছি।”

সিদ্ধান্তগুলো কী কী

মন্ত্রী জানান, ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে মোট ১৫ দিন।

ঈদুল আজহার আগের ৭ দিন থেকে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার ৭ দিন এবং ঈদের দিন থাকবে এই ব্যবস্থা।

গ্যাস সঙ্কটের কারণে বর্তমানে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখা হয়।

ঈদের পর আবার পুরনো এ নিয়মে ফিরবে ফিলিং স্টেশন।

মন্ত্রী জানান, ঈদের সময় গরুবোঝাই গাড়ি ছাড়া পণ্যবাহী যান, বিশেষ করে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকাবে মোট সাত তিন। ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন ও পরের তিন দিন থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।

কাদের বলেন, মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গরুর হাটগুলোতে সুশৃঙ্খল রাখতে হবে; মহাসড়কের উপর পশু ওঠানামা করা যাবে না; মহাসড়কের উপর পশুবাহী ট্রাক রাখা যাবে না।

অস্থায়ী হাটের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে মহাসড়ক বা সড়কের যান চলাচল ও যানজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে বলে জানান তিনি।

পশুবাহী প্রত্যেক যাবাহনের সামনে এবং পেছনে যে হাটে সেগুলো তোলা হচ্ছে, তার নাম লিখে রাখতে হবে এবার।

সড়ক-মহাসড়কের ওপর থেকে ব্যনার, ফেস্টুন পোস্টার অপসারণের সিদ্ধান্তও এসেছে। ফিটনেসহীন, রুট পারমিটহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সড়ক মহাসড়কের গর্ত সৃষ্টি হলে সেগুলো দ্রুত মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অন্যান্য সেতুর উপর গাড়ি নষ্ট হলে তা দ্রুত অপসারণ করতে হবে।”

চন্দ্রা, গাজীপুর, বাইপাইল ও আশেপাশের এলাকার পোশাক কারখানাগুলোতে ধাপে ধাপে ছুটি দিতে হবে।

কাদের বলেন, “শ্রমিকরা যেন ফিটনেসহীন গাড়ি ভাড়া করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

“সকল গার্মেন্টসে ছুটি যেন একই সময় না হয়, ধাপে ধাপে ছুটি দিতে হবে, সমন্বয় করে ছুটি দিতে হবে। আমি এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় ও গার্মেন্টস মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত রেকার রাখার নির্দেশও এসেছে।

বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু রাখতে বলেছেন মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, এবারের ঈদযাত্রায় বিআরটিসির ৫০০ বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঈদ যাত্রায় মোটরসাইকেলের দিকে বাড়তি নজর রাখতেও নির্দেশ দিয়েছেন কাদের।

তিনি বলেন, “মোটরসাইকেলে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা হয়। বিষয়টা দেখতে হবে। সিগন্যালে যদি এক ঝাঁক মোটরসাইকেল দেখেন, দেখবেন হেলমেট আছে। আবার যদি এক ঝাঁক দেখেন হেলমেট নাই, তাহলে বুঝবেন, এরা পলিটিক্স করে।”

কোনোভাবেই গাড়ি যেন উল্টোপাশ দিয়ে চলতে না পারে, সে জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন সড়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন,“রং সাইড (উল্টো দিকে) দিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপস করবেন না।”

হাসপাতলের সামনে গিয়ে হর্ন বাজনোর প্রবণতা নিয়েও পুলিশকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।

হাইওয়েতে মে মাসে ২৫ হাজার মামলা

সভায় হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়, মে মাসে মহাসড়কে ২৫ হাজার মামলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি হয়েছে ফিটনেস না থাকার কারণে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনসহ ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ, বিআরটিসি, সেতুবিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।