১৯৮৫ সালের পর সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের ঢাকা সফরের পর এটিই হবে কোনো সৌদি যুবরাজের প্রথম বাংলাদেশ সফর, জানান রাষ্ট্রদূত।
Published : 19 Nov 2022, 07:38 PM
সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
‘সুবিধাজনক সময়ে’ যুবরাজ এ সফরে আসবেন জানিয়ে ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুহাইলান বলেন, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এ সফর ‘যুগান্তকারী’ ঘটনা হবে, বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্পর্ক সুসংহত করবে।
শনিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি একথা জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বৈঠকে সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণের একটি স্বীকৃতিপত্র শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন।
যুবরাজ চলতি বছরের ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সফরের সম্মতি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, ১৯৮৫ সালের পর সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের ঢাকা সফরের পর এটিই হবে কোনো সৌদি যুবরাজের প্রথম বাংলাদেশ সফর।
কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সফরের তারিখ ও সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ সফর উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
এখন উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সফরের রূপরেখা তৈরির কাজ করবে।
সৌদি যুবরাজের সফরের সময় বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে মজবুত করবে বলে রাষ্ট্রদূত আশা করেন।
উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে 'বিশেষ' উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি যুবরাজের সফরের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপন, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং হালাল খাদ্য শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে আরও সৌদি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সৌদি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ করে মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বিশেষ জমি বরাদ্দ করতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশিদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে। সৌদি বিনিয়োগ সরকারের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাবে।
এসময় সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে অবহিত করবেন। বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে সৌদি বিনিয়োগের কিছু উদ্যোগ চলমান রয়েছে বলেও তিনি বৈঠকে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি ফাস্ট-ফুড সার্ভিস কোম্পানি ‘হারফি’সহ বেশ কয়েকটি সৌদি ব্র্যান্ড বাংলাদেশে খুব ভালো ব্যবসা করছে।
তার দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহী বলেও তিনি জানান।
তিনি জানান, গত অক্টোবরে সৌদি যুবরাজ পাঁচটি দেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল বরাদ্দ করেছেন। বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পের জন্য এ ধরনের তহবিল পাওয়া গেলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।
জবাবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম উম্মাহ তথা বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর কল্যাণে সৌদি আরবসহ সব মুসলিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
সৌদি কূটনীতিক অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরও ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “এটি অত্যন্ত উদার মনোভাব।“
তিনি আশ্বস্ত করেন সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এটি দেশের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি যৌথ উদ্যোগে সৌদি আরবে সার কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী একটি বিলম্বিত ‘পেমেন্ট শিডিউলের’ মাধ্যমে বাংলাদেশকে অশোধিত ও পরিশোধিত তেল কেনার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করে বলেন, “সৌদি আরব প্রস্তাবটি বিবেচনা করলে ক্রমবর্ধমান শিল্পের চাহিদা মেটানো আমাদের পক্ষে ভালো হবে। আমাদের কিছু সহায়তা প্রয়োজন।“
শেখ হাসিনা রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সৌদি আরবের বাদশাহ এবং দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতকালে উপস্থিত ছিলেন।