পাখি, হাতি ও ভোঁদরের পাশাপাশি পাঁচটি বড় মোটিভের সঙ্গে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের সাজ-পোশাকে ফোটে বৈশাখ উদযাপনের রঙ।
Published : 14 Apr 2024, 12:40 PM
অন্ধকার দূর করে আলো জ্বালার প্রত্যয়ে বর্ণিল সাজে ঢাকার রাস্তায় নামল মঙ্গল শোভাযাত্রা।
নতুন বছর ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানিয়ে হাজারো মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে রোববার সকাল সোয়া ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রায় রঙিন হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
পাখি, হাতি ও ভোঁদরের পাশাপাশি পাঁচটি বড় মোটিফের সঙ্গে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের সাজ-পোশাকে ফোটে বৈশাখ উদযাপনের রঙ।
সকালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। নববর্ষ উদযাপনে তার আগে থেকেই শাহবাগ এলাকা রূপ নেয় জনারণ্যে।
নানা সাজে বিভিন্ন বয়সী মানুষে অংশ নেন শোভাযাত্রায়। ঢাকের তালে তালে শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয় এটি।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় পাখি, হাতি ও ভোঁদরের পাশাপাশি ছিল ভিন্ন আরেকটি মোটিফ। চাকার মধ্যে ফুল দিয়ে একটি শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়। রিকশার চিত্রকর্মকে প্রাধান্য দিয়ে বানানো হয় এই মোটিফ। রিকশার চাকা এবং রিকশার সামনে যে ফুল থাকে, সেটি বানানো হয়েছে মোটিফ আকারে।
এছাড়া একটি শিশুর হাতে পাখা- এরকম একটি বড় মোটিফ ছিল এবার। মোট পাঁচটি বড় মোটিফের সঙ্গে অনেকেরই হাতে ছিল নানা রঙের ছোট ছোট শিল্পকর্ম। তবে মুখোশ নিষিদ্ধ ছিল এবার।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ অংশ নেন। সেইসঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মিরপুর থেকে মেট্রোরেলে করে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন কবির আহমেদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পহেলা বৈশাখে সারা দিন ঘুরব, এই পরিকল্পনা নিয়েই ঘর থেকে বেরিয়েছি। মেট্রোতে করে এসেছি শাহবাগ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে এরপর ঠিক করব কোথায় যাওয়া যায়।”
দীপু মনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পহেলা বৈশাখ বাঙালিকে এক কাতারে এনে দাঁড় করায়। সকল পরিচয় ভুলে আমরা নিজস্ব জাতিসত্তায় উজ্জীবিত হই। এই বর্ষবরণ আমাদের মাঝে ঐক্যের ভিতকে আরও মজবুত করে।”
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন ভিনদেশিরাও। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই উৎসবে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন অংশুমান ভৌমিক।
প্রথম ঢাকায় বর্ষবরণ উদযাপনের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “ঢাকার বুকে কীভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়, তা নিয়ে কলকাতায় বসে অনেক গল্প শুনেছি। আজ সেটা নিজ চোখে উপভোগ করছি। এক কথায় অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।
“সকালে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজন তো সকল বাঙালির গর্বের জায়গা। এবার নিজে উপস্থিত থেকেছি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছি। দারুণ একটা অনভূতি তৈরি হয়েছে।”
ঈদ আনন্দের রেশ থাকার মধ্যেই দেশজুড়ে চলছে বৈশাখী নানা আয়োজনের পালা। নানা আয়োজনে ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিচ্ছে গোটা জাতি।
দেশজুড়ে হাজারো সব আয়োজনের মধ্যে ঢাকার মঙ্গল শোভাযাত্রার স্থান প্রতিবারই থাকে বিশেষ কাতারে। এবারো ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনায় রঙিন হয়েছে উৎসব।
নতুন মোটিফের সঙ্গে এবার প্রথমবারের মত কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। ‘তিমির হননের গান’ কবিতা থেকে 'আমরা তো তিমিরবিনাশী' প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “প্রতিবারই একটা গোষ্ঠী মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে সারা বছর অপপ্রচার চালায়। কিন্তু মানুষ ওই একদিন এসে উৎসবে মেতে সকল অপপ্রচারের জবাব দেয়।
“এবার ঈদের ছুটির কারণে আমরা ভেবেছিলাম লোক কম হবে। কিন্তু এত লোকের সমাগম দেখেই বোঝা যায় মানুষ কীভাবে প্রাণের উৎসবে একত্রিত হয়।”
গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ কর্মসূচি।
সাধারণত চারুকলা অনুষদের শেষবর্ষের শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতির দায়িত্ব পালন করে থাকে। সে অনুযায়ী এবার অনুষদের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতির মূল দায়িত্ব পালন করেন। তারা শোভাযাত্রার বিভিন্ন মোটিফ ও শিল্পকর্ম তৈরি করেন।