বিএনপি নেতা এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন দল থেকে কায়সার কামালের বহিষ্কার দাবি করেছেন।
Published : 22 Apr 2024, 04:16 PM
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিএপি নেতা এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সংগঠনের সম্পাদক কায়সার কামালের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন।
সংগঠন থেকে অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার দুইদিন পর সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক নম্বর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি কায়সার কামালকে ‘বালক’, ‘অর্বাচীন’, ‘কুলাঙ্গার’ বলে আখ্যায়িত করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খোকনকে ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয় গত শনিবার।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে অব্যাহতির কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে আমাকে যে চিঠি দিয়েছে তার কোনো গঠনতন্ত্রই নেই। তাহলে কীভাবে আমাকে অব্যাহতি দেয়?
“আপনারা ওই চিঠিতে দেখেছেন, এখানে আমাকে কোন ধারায় অব্যাহতি দিয়েছে তার কোনো উল্লেখ নেই। কীভাবে থাকবে? এর তো কোনো গঠনতন্ত্র নেই।”
সংগঠনের সম্পাদক কায়সার কামাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সব পদে ‘ওয়াকওভার’ দিতে চেয়েছিলেন বলে খোকন অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “ভোট গণনা শুরু হলে আমাদের প্যানেলের (নীল) সবাই যখন এগিয়ে ছিল তখন এই ফোরাম থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয় যেন আমাদের দলের কেউ ভোট গণনায় না থাকে। তিনি কার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিলেন?”
তিনি বলেন, “দলের নেতা তারেক রহমান নিজে আমাদের মনোনয়ন দিয়েছেন, প্যানেল ঘোষণা করেছেন। তিনি তো আমাদের ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে, গণনায় উপস্থিত না থাকতে বলেননি।”
এক পর্যায়ে তিনি কায়সার কামালের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় নৈতিক স্খলনের মামলা, গ্রেপ্তার, হাই কোর্টে মুচলেকা দিয়ে জামিন নেওয়ার তথ্য তুলে ধরেন।
খোকনের অব্যাহতির চিঠিতে বলা হয়েছিল, তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আগে একটি সভা করেছিলেন, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মাহবুব উদ্দিন খোকন সংবাদ সম্মেলনে কায়সার কামালের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার ওই সদস্যদের নাম প্রকাশের দাবি জানান।
এ ধরনের ব্যক্তিকে দলে রাখা যায় না উল্লেখ করে তিনি কায়সার কামালকে দলে থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান।
গত ৬ ও ৭ মার্চ দুদিন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের ভোটগ্রহণ করা হয়। এরপর ৯ মার্চ রাত দেড়টায় নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন।
নির্বাচনে সভাপতি পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হন। অন্যদিকে সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ তথা সরকার-সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে সম্পাদক, দুই সহ-সভাপতি, দুই সহ-সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও সদস্য পদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ১০ জন বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সভাপতিসহ ও তিনটি সদস্যসহ চার পদে বিএনপি-জামায়ত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
ফলাফল ঘোষণার পর মাহবুব উদ্দিন খোকনকে সভাপতির দায়িত্ব না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। গত ২৭ মার্চ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদের এ আহ্বান জানানো হয়।
কিন্তু ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৪ এপ্রিল এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে এই প্যানেল থেকে জয়ী নির্বাচিত অন্য তিন সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।
খোকনকে অব্যাহতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত ৬ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আপনার (মাহবুব উদ্দিন খোকন) এমন কার্যক্রমকে দলীয় চরম শৃঙ্খলা পরিপন্থি হিসেবে গণ্য করে সর্বসম্মত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”
মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি
চিঠিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিগত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাকে/আপনাদের এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি/ আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদকালের দায়িত্বগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। আপনি/আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।
“ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে।”