আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
Published : 19 Dec 2022, 06:14 PM
এক যুগের বেশি সময় পর প্রাথমিকের ‘বৃত্তি পরীক্ষা’ ফিরিয়ে আনার যে সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়েছে, তা ‘প্রত্যাহারের’ দাবি জানিয়েছেন ৩০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
সোমবার এক বিবৃতিতে ‘পুরনো ব্যবস্থায়’ আকস্মিক এ পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর ‘নেতিবাচক প্রভাব’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করে একটি বৃত্তি কার্যক্রম শুরু করলে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে এ পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রাখা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘কারা’ সরকারি বৃত্তি পাবে, তা নির্ধারণে এক সময় আলাদাভাবে এই পরীক্ষা নেওয়া হত, যা ‘বৃত্তি পরীক্ষা’ নামে পরিচিত ছিল।
২০০৯ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) শুরু হওয়ার পর আলাদা ‘বৃত্তি পরীক্ষা’ বন্ধ হয়ে যায়; পিইসি’র ফলের ভিত্তিতেই বৃত্তি দেওয়া শুরু হয়।
গেল দুবছর সেই সমাপনী পরীক্ষা হয়নি; পরে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী সমাপনী পরীক্ষা আর নেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছিল।
এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকে মেধা-বৃত্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থী বাছাইয়ে ৩০ ডিসেম্বর পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় তা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন বিবৃতিদাতারা।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ ও বর্তমান সরকারের কিছু পদক্ষেপে শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু দৃশ্যমান সাফল্য রয়েছে। তবে আকস্মিক পুরনো ব্যবস্থায় বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে তারা ‘উদ্বিগ্ন’।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর
তাদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী শিক্ষায় পরিবর্তনের যে ইতিবাচক ধারা তৈরি হচ্ছে, সেখানে এভাবে হুট করে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর নানামুখী মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়বে।
“এ পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে অভিভাবকদের বাড়তি খরচেরও সম্মুখীন হতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
“শুধুমাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বৃত্তি পরীক্ষা চালুর ঘোষণা আমাদের হতাশ করেছে। শিক্ষা নিয়ে প্রায়শ এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে থাকে, যা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়।”
সেক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সব শিক্ষার্থীর জন্য উপজেলাভিত্তিক বাছাইয়ের মাধ্যমে মেধাবৃত্তি দেওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনা করার আহ্বান জানান বিশিষ্টজনরা।
এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, অভিনেতা ও পরিচালক রামেন্দু মজুমদার, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, নাট্যকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক এম এম আকাশ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, এমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম।
এছাড়া অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, কাজী ফারুক আহমেদ রয়েছেন, অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, নাট্যকার মামুনুর রশীদ ও এজাজুল ইসলাম, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম, মানবাধিকারকর্মী মনসুর আহমেদ চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক মোস্তাক রাজা চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসন্দ, নারী নেত্রী মালেকা বেগম, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন খালেদ মাসুদ পাইলট, অধ্যাপক শফি আহমেদ ও অধ্যাপক এম তারিক আহসান রয়েছেন বিবৃতিদাতাদের মধ্যে।